ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএল-৫৪৯) এর রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান অংশীদার মো. আমিন নূর এ অর্থ পাচার প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।
জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কেন মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ হলো, তা তদন্ত করতে গঠিত তদন্ত কমিটি অর্থ পাচারের অভিযোগও খতিয়ে দেখবে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে কমিটি। সেক্ষেত্রে দুদক বা সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) মামলা দায়ের করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর আড়ালে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগটি প্রথম করেছেন ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম রফিক। তিনি তার সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রতিটি শ্রমিকের কাছ থেকে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে। বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট না থাকলে নেপালের মতো এক লাখ কর্মী বিনামূল্যে মালয়েশিয়ায় পাঠানো যেত। এতে দেশের রাজস্ব খাত উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হতো।
এ অভিযোগে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান অংশীদার মো. আমিন নূরকে এ সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে দেশটিতে পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের গডফাদাররা লন্ডন ও কানাডায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন>> মালয়েশিয়ায় সাড়াশি অভিযানে ৮৪ বাংলাদেশি আটক
চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, মালয়েশিয়ায় বিনা খরচে দুই লাখেরও বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় বিনামূল্যে ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ বিশেষ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট চাঁদা মওকুফ করার কথাও বিবেচনা করেনি। বিনা পয়সায় কিছু শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হলেও সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন>> ‘মালয়েশিয়া চক্রে’ চার এমপির প্রতিষ্ঠান
গত দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ প্রবাসীকে মালয়েশিয়ার গডফাদারদের বিনোদন ও অবৈধ অর্থের লালসা মেটাতে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে, বৈধ দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, এবং সরকারের মানহানি হয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের ভিত এতটাই মজবুত যে, কেউই এদের তদন্ত করতে সাহস পায় না। তারা কার্যকরভাবে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ও তাদের অপরাধকে দেশের প্রকৃত আইনে পরিণত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত এক শতাব্দীতে সরকার দুইবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছে। তবে শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ শ্রমিকদের শোষণ করা হয়েছে, সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়েছে। নিরীহ শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে চাঁদাবাজি করা হয়েছে। দেশের চলমান বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিঃশেষ হয়ে গেছে, কোটি কোটি ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। বিদেশে নগদ অর্থ পাচার ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রার বাজারকে দেউলিয়া করে, কিছু ব্যক্তি শ্রমবাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।