‘প্রবাসীদের ভোটের অধিকার ও দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন।
দেশ পরিচালনায় অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিকে যুক্ত করাসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
‘প্রবাসীদের ভোটের অধিকার ও দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রবাসীদের পক্ষে দাবি উপস্থাপন করেন প্রবাসী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ ও প্রবাসী সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন দিনের পর দিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাংলাদেশি, যারা প্রবাসে থাকেন, তাদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের পরিবার ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রবাসী কার্ডসহ নিজ নিজ থানায় প্রবাসীদের তালিকা রাখার দাবি জানাই। এ ছাড়া বিনিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য টিন সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়ে আলাদা বিনিয়োগ দেখার জন্য বিনিয়োগ ডেস্ক স্থাপন করার দাবি জানাচ্ছি।
পতিত সরকার ও প্রতিবেশী বড় একটি দেশ বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একার পক্ষে এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একটি পজিটিভ দিক হচ্ছে তার দেড় কোটি নাগরিক প্রবাসী। তাদের সঠিকভাবে যুক্ত করলে তারা বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে একেকজন আনঅফিশিয়াল এম্বাসাডরের ভূমিকা পালন করতে পারেন।
প্রবাসীদের ছয় দাবি ১. দেড় কোটির ওপরে প্রবাসী অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন। চাকমাদের জন্য প্রতিটি সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে দেড় কোটি প্রবাসীর জন্য কোনো সরকারেই প্রবাসী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কাছে দেশ গঠন ও সরকার পরিচালনায় প্রবাসীদের আনুপাতিক হারে (অন্তত ১০ শতাংশ) সুযোগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
২. ব্রিটেনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে শত শত দক্ষ প্রফেশনাল আছেন, যারা নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। হাজার হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও লন্ডন ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট আছেন, যারা বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে মালয়েশিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মদ ব্রিটেনে গিয়ে ব্রিটিশ-মালয়েশিয়ানদের মধ্যে টেলেন্ট হান্ট করতেন। এটি করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সুপ্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের নিজ দেশকে দেয়ার মতো অনেক প্রতিভা আছে।
৩. বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এমনকি প্রধান বিচারপতি হতে পারলেও এমপি হওয়ার পথে সাংবিধানিক বাধা ও বৈষম্য রাখার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। সুতরাং জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক যারা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের জন্য সংবিধানের বৈষম্যমূলক ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
৪. ব্রিটেন থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে ভেলিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দুই থেকে তিন বছর আগে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সঙ্গে ভেলিড বাংলাদেশি পাসপোর্টের সম্পর্ক কী, তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন আজগুবি নিয়ম নেই। এ নিয়ম চালু করার কারণে ব্রিটেনে বসবাসরত লাখ লাখ প্রবাসী মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। অন্য দেশের প্রবাসীরাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ অবস্থায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে আইডি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট অথবা ব্রিটিশ পাসপোর্ট অথবা এনআইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য বলে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাচ্ছি।
৫. প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রবাস থেকে যেন ভোট দিতে পারেন, এটা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অতীতের কোনো সরকারই এ দাবি পূরণে আন্তরিকতা দেখায়নি। অথচ এ দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
৬. প্রবাসীদের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া ও অভিযোগ আছে। এসব দাবি ও অভিযোগ অতীতে সরকারের কাছে পাঠালেও যথাযথ জবাব পাওয়া যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। অনুরূপভাবে প্রবাসীদের ন্যায়সংগত অধিকার, দাবি-দাওয়া, সেবার মান ও অভিযোগ বিষয়ে সংস্কারের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।
আপন দেশ/এসএমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।