Apan Desh | আপন দেশ

মে দিবস আজ, শ্রমিক মুক্তির দিন

রায়হান উল্লাহ

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

আপডেট: ২১:০৫, ৭ মে ২০২৩

মে দিবস আজ, শ্রমিক মুক্তির দিন

ফাইল ছবি

আজ পহেলা মে; আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিনটি মে দিবস হিসেবে পরিচিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। 

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। নানা কর্মসূচিতে দিবসটি পালন করা হবে। 

১৯৮৬ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল আন্দোলন। আচমকা পুলিশের উদ্দেশ্যে বোমা ছুঁড়ে কোনো এক অজ্ঞাতনামা। জবাবে নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর বর্বর হামলা চালায় পুলিশ। আন্দোলন দমাতে তারা গুলি করলে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন বহু শ্রমিক। পরে গ্রেফতার ছয় শ্রমিককে প্রহসনের বিচারে ফাঁসিও দেয়া হয়। এতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। অবশেষে দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রথম কংগ্রেস। সেখানে পরের বছর থেকে শিকাগো ঘটনার বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব রাখেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালে দ্বিতীয় কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় এই প্রস্তাব।

অবশ্য ১৮৯৪ সালের মে দিবসে ঘটে দাঙ্গা। এরপর ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত হয় একটি প্রস্তাব। দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মদিবস নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।

সম্মেলনে শ্রমিকদের হতাহতের আশঙ্কা না থাকলেও বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশ এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায়; সেটি কার্যকরও করা হয় কয়েকটি দেশে।

বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ‘শ্রম দিবস’ পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা।

হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ধারণা করেছিলেন, পহেলা মে’র যেকোনো আয়োজন সংঘাতে রূপ নিতে পারে। সে কারণে ১৮৮৭ সালে তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সেই প্রথা কিংবা রেওয়াজ এখনো চলে আসছে।

দিনটি একইসঙ্গে শোক ও আনন্দের। কারণ এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শ্রমিকের রক্ত, ক্ষোভ ও বিষ্ফোরণের ফসল ভোগ করছেন সারা বিশ্বের অসংখ্য শ্রমিক। আগামীর শ্রমিকরাও ভোগ করবেন; অজানা সময় পর্যন্ত।

দিনটি জাতীয় ছুটির দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন রাজপথে সংঘবদ্ধ মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এই দিবসটি মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও দিন। শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটারও দিন এটি। 

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও শ্রমবান্ধব বর্তমান সরকার শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণসাধন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।’

মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে যেকোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে।’

মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা,  সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।

মে দিবস উপলক্ষে আজ ১ মে বিকাল ৩ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করবে জাতীয় শ্রমিক লীগ। সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।

বলা চলে ২০২০ সাল থেকে অন্য রকম মে দিবসের দেখা পায় পৃথিবী। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবায় অধিকাংশ কল-কারখানাই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা কাটান ঘরবন্দি জীবন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের শ্রমিকদের মনে এরইমধ্যে বাসা বাঁধে চাকরি হারানোর ভয়। সাম্প্রতিক অনেক পরিসংখ্যান বলছে কোটি কোটি শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঠিক এই মুহূর্তে মহান মে দিবস আজ।

সকল শঙ্কা ও ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে একদিন। তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে দেশ ও বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। আসবে আবার নতুন প্রভাত। মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে উঠবে। শ্রম দিবসের লড়াইও সার্থক হবে। মে দিবস কেবল একটি উৎসবের দিন নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞারও দিন। সেই প্রতিজ্ঞা হলো, পৃথিবীর তাবৎ মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াই। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়