Apan Desh | আপন দেশ

ভাসমান বেডে সমজি চাষে সফল প্রদীপ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভাসমান বেডে সমজি চাষে সফল প্রদীপ

ছবি: সংগৃহীত

ছয় বছরের প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে আসেন আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ বিশ্বাস (৪৫)। শুরু করেন ভাসমান বেডে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে পেয়েছেন সাফল্য। এ বছর তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় কচুরিপানা দিয়ে ৯০টি ভাসমান বেড করেছেন। এরমধ্যে ২২টিতে লাল শাক ও ঢেঁড়শের আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে ২২টি বেড থেকে ২০ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছেন। ওই বেডগুলোর ঢেঁড়শ গাছে ফলন শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে তিনি ঢেঁড়শ বিক্রি করতে পারবেন।

বাকী ৬৮টি বেডে তিনি সাম্মাম, পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করবেন। ৯০টি বেড থেকে তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয়ের প্রত্যাশা করছেন।

সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ছিলনা গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ। ২০০৮ সালে দুবাই যান তিনি। সেখানে তিনি কনস্ট্রাকশন কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এ কাজ তার ভালো  লাগেনি। তাই তিনি  দেশে ফিরে নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০১৪ সালে প্রদীপ দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন কচুরিপানার  ভাসমান বেডে সবজি চাষ। এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য পান। 

প্রদীপের ভাসমান বেডে সবজি চাষ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, পানির উপরে তার  ভাসমান বেডগুলো সারিবদ্ধভাবে ভেসে রয়েছে। বেডগুলো জলাশয়ে অনন্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সেখানে  এখন শুধু লাল আর সবুজের সমারোহ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।

আত্মপ্রত্যয়ী প্রদীপ বলেন, নয় বছর ধরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছি। এ পদ্ধতির চাষে রাসায়নিক সারা বা কীটনাশক ব্যাহার করা হয় না। তাই ভাসমান বেডের সবজি সুস্বাদু, বিষমুক্ত ও মানবদেহের জন্য নিরাপদ। বর্ষার সময় বাজারে সবজির আমদানী কমে যায়। এ সবজির চাষাবাদ সম্প্রসারণ করে  বাজারের সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া  বাজারে এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হয়।

ওই কৃষক আরও বলেন, সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর ৯০টি বেডে করেছি। এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আমাকে বেড তৈরির সব খরচ দিয়েছে। সঙ্গে ট্রে, জাল, বাঁশ, বীজ সংরক্ষণের কৌটা, আট প্রকার সবজি বীজ বিনামূল্যে দিয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ২২টি বেডে লাল শাক ও ঢেঁড়শ রোপণ করেছি। এখান থেকে ২০ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছি। ঢেঁড়শ গাছ বড় হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢেঁড়শ বিক্রি করতে পারব। বাকী ৬৮টি বেডে সাম্মাম, পেঁয়াজ ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করব। এসব চাষাবাদের সব খরচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিয়েছে। তাই এখান থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয়ের প্রত্যাশা করছি।

ওই কৃষক আরও বলেন, বছরের সাত মাস আমাদের জমি জলমগ্ন থাকে। এখানে কোনো ফসল হয় না। জলমগ্ন জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করে, ওই সাত মাস ভাসমান বেডে আমি সবজি আবাদ করি। আমার দেখাদেখি অনেকেই এ পদ্ধতির চাষাবাদ শুরু করেছেন।

সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, প্রদীপ অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী কৃষক। তিনি মেধা ও শ্রমকে যুগলবন্দী করে ভাসমান বেডে সবজি চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে অনেকেই অনুকরণ করছেন।

ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলা চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, আমরা জলাবদ্ধ আনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছি। জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান বেড ও ডালি পদ্ধতিতে কৃষকদের দিয়ে সবজি চাষাবাদ করাচ্ছি । এ পদ্ধতির চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারছি। এটি সম্প্রসারিত হলে জলাবদ্ধ এলাকায় সবজি ও মসলার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।  অনেক জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। সেই সঙ্গে কৃষকও লাভবান হবেন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়