Apan Desh | আপন দেশ

শীত নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অধিদফতর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

শীত নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অধিদফতর

ছবি : সংগৃহীত

একদিনের ব্যবধানে দেশজুড়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে আর কমেছে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার। এর মাঝেই মাসের শেষ দিন বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন পাঁচ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ আগের দিন রোববার (২৮ জানুয়ারি) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় থার্মোমিটারের পারদ নেমেছিল পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

রোববার যেখানে দেশের ২৮ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল, সেখানে সোমবার মৃদু থেকে শৈত্যপ্রবাহ বইছে রাজশাহী, রংপুর বিভাগসহ টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রবিশাল ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ সোমবার বলেন, বুধবার রাত থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির পর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়লে তাপমাত্রাও বাড়বে।তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে। তারপর দুই থেকে তিন দিনে তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।

তরিফুল নেওয়াজ বলেন, শীত কতদিন থাকবে তা নির্ভর করছে এলাকার ওপর। ঢাকার দিকে দেখা যাচ্ছে অনেকটা তাপমাত্রা বাড়ছে, কিন্তু উত্তরের দিকে খুব একটা বাড়েনি৷ স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় ফেব্রুয়ারির ১৫ দিন পর্যন্ত শীত থাকে। উত্তরের দিকে হয়ত আর কিছুটা বেশি থাকবে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিনে ও রাতে সমান ঠাণ্ডার অনুভূতি ছিল, তা কিছুটা অস্বাভাবিক। শীতকালে সাধারণত দিনে রোদ থাকে, রাতে শীত নামে। আগামী কয়েক দিন শৈত্যপ্রবাহের এলাকা বাড়তে পারে। বুধবার থেকে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ এলাকায় আকাশ মেঘলা হয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, জানুয়ারি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এই মাসে বেশি শীত পড়বে– এটিই স্বাভাবিক। এ সময় উপমহাদেশে ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় কখনও ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগসম্পন্ন বাতাস নিচে নেমে আসছে, কখনো ওপরে উঠে যাচ্ছে। এ কারণে শীতের প্রকোপ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।

এদিকে, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র শীতে জীবনযাত্রা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। রাতে ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। মহাসড়ক ও নদীপথে এ সমস্যা বেশি। 

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান, এক দিনের ব্যবধানে তিন ডিগ্রি কমে রোববার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা পাঁচ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মাঘের হাড় কাঁপানো শীত ও কুয়াশায় দিনাজপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত।

উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের জনপদ। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীসহ পেশাজীবী মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। গত ১১ দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। 

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত পাঁচ বছরের মধ্যে তেঁতুলিয়ায় রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ সোমবার থেকে প্রতিদিনই রাতে তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি বাড়বে। ফলে শীতের তীব্রতা কমে আসবে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ছয় দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বনিম্ন। টানা শৈত্যপ্রবাহে ঈশ্বরদীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আট দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে।

জয়পুরহাটে রোববার বেলা ১১টার দিকে রোদের দেখা মিলেছে। তবে কমেনি শীত। এতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতের কারণে কুষ্টিয়ার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সোমবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ কমতে পারে।রোববার তাপমাত্রা কমলেও সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা বেশি থাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে। ফলে অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা কমলেও শীতের তীব্রতা বেশি বাড়েনি। সোম ও মঙ্গলবার তাপমাত্রা বেড়ে কমবে শীতের অনুভূতি।কয়েক দিন ধরে কুয়াশাও কমছে।’

আগামীকাল মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কোনো কোনো জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনের মধ্যে খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। 

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টির সময় দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমে শীত কিছুটা বাড়তে পারে। বৃষ্টির পর আবার রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও স্বাভাবিকভাবেই ফেব্রুয়ারির শীত জানুয়ারির মতো বেশি হবে না।

রোববার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, পাঁচ ডিগ্রি। পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, চার দশমিক পাঁচ ডিগ্রি। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।

আরও পড়ুন <> ঘনকুয়াশায় সবজি উৎপাদন ব্যাহত

ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে শূন্য দশমিক তিন ডিগ্রি। রোববার রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক সাত ডিগ্রি। সামগ্রিকভাবে অঞ্চলভেদে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পাঁচ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে। তবে দেশের অনেক জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমলেও সামগ্রিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে। আগের দিন অঞ্চলভেদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও রোববার তা ছিল ২২ থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যে।

পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বেশি থাকছে সন্ধ্যা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত। মাঘের শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের। প্রয়োজনীয়সংখ্যক শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে রাত পার করছে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। সরকারিভাবে রোববার পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৫০০ কম্বল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা জেলার দরিদ্র মানুষের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

নীলফামারীতেও বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।রোববার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি। শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা বাড়িয়ে দেয় শীতের তীব্রতা। জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, ‘তাপমাত্রা কম থাকলেও কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর সূর্য ওঠায় শীত কম অনুভূত হয়েছে।’

কুয়াশার কারণে জেলার অনেক জায়গায় সকালে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। ঘন কুয়াশায় ধানের বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। 

টুপামারী ইউনিয়নের দোগাছি গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী (৩৫) বলেন, ‘আজি সকাল থাকি ঠাণ্ডা বেশি লাগেছে, কুয়াশা পড়িছে বেশি। এই মতন কুয়াশাত আলুক্ষেত নষ্ট হচ্চে।’

দেশের বড় এলাকাজুড়ে তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদফতর। তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলে মাঝারি এবং আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। 

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়