Apan Desh | আপন দেশ

অনলাইনে ফুলের ব্যবসায় সফল আল-আমিন

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

অনলাইনে ফুলের ব্যবসায় সফল আল-আমিন

ছবি : সংগৃহীত

করোনা মহামারীতে গোটা বিশ্বের সঙ্গে মন্দাভাব পড়েছিল ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালিতেও। ঠিক সেই সময় ঘুরে দাঁড়নোর স্বপ্ন দেখেন সদ্য স্কুলের পাঠ শেষ করা তরুণ আল-আমিন।

মহামারীতে অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হওয়ায় স্থানীয়ভাবে চাষ করা ফুল কীভাবে দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছানো যায় সেই ভাবনা থেকে ফেসবুকে ‘ফুলের বাজার ডটকম’ নামের একটি পেজ খোলেন তিনি।

এখন প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্তে ফুল পাঠাচ্ছেন এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে; চার বছরে তার ফলোয়ার দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখে। অনলাইনে ফুল ব্যবসায় তিনি এখন স্বাবলম্বী।

২২ বছরের তরুণ আল-আমিন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের আন্দোলপোতা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমানের ছেলে।

আল আমিন জানান, সবকিছু থমকে গেলেও মহামারীর তার জন্য আশীর্বাদ হয়েছিল। ২০২০ সালের জুন মাসে ফেসবুক পেজ খুলে ফুলের ব্যবসা শুরু করেন। বাইরে মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় ঘরে বসেই গদখালির ফুল পেতে তার পেজের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

তিনি বলেন, করোনাকালে ক্রেতার অভাবে ফুল পশুখাদ্যে পরিণত হয়। তখন সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। তখনই ফেসবুকে 'ফুলের বাজার ডটকম' পেজ খুলে বসি। এরপর ব্যাপক সাড়া পাই।

ফুল কীভাবে ক্রেতাদের কাছে যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতারা ঘরে বসেই ভিডিও কলে ফুল দেখে পছন্দের ফুল অর্ডার দেন। গদখালি ফুলের বাজারে যে দাম থাকে, সেই দামেই তারা কিনতে পারেন। ভালো মনের ফুলের দামও বেশি হয়। কুরিয়ার সার্ভিস ও যানবাহনের মাধ্যমেও সারা দেশে ফুল পাঠানো হয়।

যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজারে প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই চাষি, পাইকার ও মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা সকাল সকাল তাজা ফুল কিনে নিয়ে যান। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস ছাড়াও জিপসি, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, লিলিয়াম, চন্দ্র মল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল বিক্রি হয় এ বাজারে।

দেশে বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ ফুল বেচাকেনা হয়, তার ‘৭৫ শতাংশই’ যশোরে উৎপাদিত হয় বলে জানান যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম।

আরও পড়ুন <> পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর মাটিয়ান দীঘি

গদখালির ফুলের দেশব্যাপী চাহিদা থাকায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন আল-আমিন। অনলাইনে কোন ফুলের চাহিদা বেশি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, কামিনী ও জিপসি ফুলের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বাসর ঘর সাজানো, স্কুল-কলেজে নবীনবরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কিংবা দোকানে বিক্রি করার জন্যও ফুলের অর্ডার আসে।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সম্প্রতি কুয়েতেও ফুল পাঠানোর কথা জানিয়ে আল-আমিন বলেন, ফুলের বীজও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কাতার, লন্ডনে পাঠাতে পেরেছি।

ফুলের বাজার ডটকম থেকে আয় কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাসে অন্তত ২৫ হাজার টাকা থাকে। তবে বিয়ের মৌসুম কিংবা বিশেষ দিবস ঘিরে এক সপ্তাহেই এই টাকা আয় হয়। বিভিন্ন জেলার পাইকারদের কাছে বিক্রি, ডালা তৈরি, মঞ্চ সাজানোর ফুল থেকেও প্রতিদিনের একটি আয় থাকে।

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, আল-আমিন প্রতিদিন সকালে গদখালির বাজারে এসে ফুল নিয়ে ছোটাছুটি করে। আমাদের কাছে ভালোই লাগে, গদখালীর ফুল সারা দেশে যাচ্ছে। আল-আমিনের দেখাদেখি অনেক বেকার যুবকও অনলাইনে ফুলের ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখছে।

ফুলের উৎপাদন আরও সমৃদ্ধ করে দেশের বাইরেও বাজার সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখেন আল-আমিন। কৃষি অফিসের সহযোগিতা আশা করেন তিনি।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়