ছবি : সংগৃহীত
দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষক গোলাম মোস্তফা। চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় ও বাজারে সাদা ফুলকপির চেয়ে দাম বেশি পাওয়ায় লাভের আশা করছেন তিনি।
অধিক লাভ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা। এই জাতের ফুলকপির আবাদ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। নতুন জাতের এই কপি স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের।
হিলির খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামে কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রদর্শনী হিসেবে ২০ শতক জমিতে ভ্যালেন্টিনা পিংক ফুলকপি চাষ করেন কৃষক গোলাম মোস্তফা। ইতোমধ্যে ক্ষেতে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের কপি। নতুন জাতের দৃষ্টিনন্দন এই কপি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। স্বাদ নিতে অনেকে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার মতো আবাদ করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।
চাষাবাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে বলরামপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের আর কোথাও এই জাতের ফুলকপি চাষাবাদ হয়নি। গোলাম মোস্তফা প্রথম চাষাবাদ করেছেন। লোকমুখে শুনে দেখতে এসেছি। এতদিন সাদা ফুলকপি দেখলেও এই প্রথম বেগুনি রঙের দেখলাম। দেখতে যেমন সুন্দর লাগছে, এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নাকি বেশি। বাজারে সাদা ফুলকপির চেয়ে দাম এবং চাহিদাও বেশি। এ কারণে চাষ লাভজনক। তাই গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম কীভাবে লাগিয়েছেন, কোথায় বীজ পেয়েছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামীতে আমিও চাষ করবো।’
একই গ্রামের কৃষক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে এবং পরামর্শ নিতে এসেছি। বেশ সাড়া ফেলেছেন কৃষক গোলাম মোস্তফা। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন। আগামীতে এই রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করবো। এজন্য মোস্তফা ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন <> বল সুন্দরী বরই চাষে কৃষকের আগ্রহ
গোলাম মোস্তফার কৃষিজমিতে কাজ করা শ্রমিক সবুজ হোসেন বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ফুলকপি। আবহাওয়া ও মাটি উর্বর হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। চারা রোপণ, পানি, সার, নিড়ানি দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছু করেছি আমি। বর্তমানে গাছে ফুলকপি ধরেছে। আকার বেশ বড়। রঙিন হওয়ায় দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। নতুন ফসলটি স্থানীয় কৃষকরা দেখতে আসছেন, ছবি তুলছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন।’
কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে উপজেলায় প্রথমবারের মতো এই জাতের কপি চাষ করেছেন বলে জানালেন কৃষক গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় এবং কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ-সার ব্যবহার করায় ভালো ফলন হয়েছে। চারা রোপণের ৬০-৬৫ দিনের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু করেছি। বাজারে সাদা ফুলকপির চেয়ে এর দাম ও চাহিদা বেশি। সাদা ফুলকপি ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এটি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষেত থেকেই অনেকে কিনছেন। চাষাবাদে ১৪-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাজারে যে দাম রয়েছে তাতে ৪৫ হাজার টাকার কপি বিক্রি করতে পারবো। তাতে খরচ বাদ দিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।’
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, ‘এটি পারপেল কালার। বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এর মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ রয়েছে। সেইসঙ্গে ঔষধিগুণ সম্পন্ন। বাজারে যে সাদা ফুলকপি পাওয়া যায়, তার চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আগামীতে যাতে আরও বড় পরিসরে কৃষকরা রঙিন ফুলকপি চাষাবাদ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে আমাদের কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হবে।’
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।