ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষা আসছে দেরিতে, যাচ্ছেও দেরিতে। দেশে তাপপ্রবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার শীতের মধ্যেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখছি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আবহাওয়া অধিদফতর আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে এ তথ্য জানান। গত ৪৩ বছরের আবহাওয়ার নানা পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ গবেষণায়। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ও নরওয়ের আরও পাঁচজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ। বছরের চারটি সময় ধরে এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— শীতকাল (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), প্রাক্-বর্ষা (মার্চ, এপ্রিল ও মে) বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এবং বর্ষা-পরবর্তী (অক্টোবর ও নভেম্বর)।
গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আজিজুর রহমান বলেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে দেশে। বর্ষা আসার সময় পাল্টেছে। বিলম্ব হচ্ছে চলে যেতেও। শুধু বর্ষা নয়, শীত বা গ্রীষ্মেও বেড়ে যাচ্ছে তাপ। মেঘাচ্ছন্ন দিনের পরিমাণ বাড়ছে। তাতে শীতের দিন তাপ বাড়লেও শীতের তীব্রতার অনুভূতি হচ্ছে বেশি মাত্রায়। এর সঙ্গে বাড়ছে বায়ুদূষণ।
তিনি আরও বলেন, নরওয়ের সরকার ১৩ বছর ধরে আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণায় বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরকে সহায়তা করছে। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবণতা বুঝতে সেই সহায়তা খুব কার্যকর হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টার সেভেন্ডসন বলেন, আমাদের একটাই পৃথিবী। জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব থেকে আমরা কেউ মুক্ত থাকতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে কার্যকর বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।
গবেষণায় তাপমাত্রার পরিবর্তন বুঝতে আবহাওয়া অধিদফতরের ৩৫ স্টেশনের ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রার পরিবর্তনের দিকটি উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ক্রমেই জলবায়ু পরিস্থিতি উষ্ণ হচ্ছে। সব ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে।
ঢাকার তাপমাত্রার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৪০ বছরে দেখা গেছে প্রাক্-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী—তিন সময়েই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯, শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুধু শীতকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেছে শূন্য দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ৪টি কালেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে।
এছাড়াও ঢাকাসহ আট বিভাগেই বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে খরাপ্রবণ রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে, শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিবহুল সিলেটেও এ সময় তাপমাত্রা বেড়েছে একই রকম মাত্রায়। ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।