ছবি: আপন দেশ
ভুট্টা চাষে ভালো ফলন ও দাম পেয়েছেন আবাদিরা। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারেও বেড়েছে দাম। আগাম ভুট্টা প্রতি মণ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপ্রত্যাশিত দাম পাওয়ায় খুশি নীলফামারীর চরাঞ্চলের ২০ হাজার কৃষক।
এ বছর জেলায় ২৬ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমি ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৬৮ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, এ বছর আগাম ভুট্টায় ফলন কিছুটা কম পেয়েছেন। তবে ভুট্টার দাম ভালো হওয়ায় তিনি খুশি।
তিনি জানান, সেচ-সার ও কীটনাশক প্রতি একর ৩৫-৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও ১১০-১৪০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায়। গতবারের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সে তুলনায় ১ লাখ ৩২ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি হয়েছে। সেচ-সার ও কীটনাশক খরচ বাদে একর প্রতি ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। যা অন্যান্য অর্থকারী ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ।
ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ বছর নদীর বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। সবমিলে আবহাওয়া ভালো ছিল। ফলন কিছু জায়গায় ভালো হয়েছে আর কিছু জায়গায় কম হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় অনেকটা ভালো হয়েছে। দাম এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছে। বলা চলে ব্যয়ের চেয়ে দ্বিগুণ দাম পাওয়া যাচ্ছে ।
ভুট্টা চাষে নিয়োজিত নারী শ্রমিক মজিদা বেগম, আমেনা বেগম, রূপালী আক্তার ও তবিয়া বেগম বলেন, ভুট্টা ক্ষেতে শ্রম দিয়ে পুরুষরা যেমন অর্থ উপার্জন করেন তেমনি আমরা উপার্জন করছি। দিন প্রতি ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। ভুট্টা এসে সবার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। চরে আর আগের দুর্ভোগ নেই, সবাই সচল।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, আমাদের অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে কোনো গুদাম নেই। ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিছু গুদাম গড়ে উঠলেও সেগুলো নারিশ, কাজী ফার্ম ও প্যারাগনসহ অন্যান্য বড় কোম্পানির দখলে। ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গুদাম হলে আরও দাম বেশি পেত মাঠের কৃষক।
আরও পড়ুন>> লবণের প্রভাব কাটিয়ে সবুজ ফসলের চাষাবাদ
তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো আসাতেও অনেকটা লাভ হয়েছে। আগে ভুট্টা কিনে বিভিন্ন শহরে পাঠাতে হতো কিন্তু এখন আগেই টাকা পাওয়া যায়। তাদের লোকজন অনেক সময় সরাসরি কৃষক পর্যায়ে থেকেও ভুট্টা ক্রয় করে। এতে কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ জেলায় বেশি ভুট্টা চাষ ও ভালো ফলনের কারণ হলো জেলার বেশি ভাগ জমির মাটি বেলে-দোআঁশ। তাই কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ভুট্টা চাষে পরিচর্যা এবং বীজ নির্বাচনে সহযোগিতা দেয়া হয়। জেলার প্রায় ২০ হাজার কৃষক ভুট্টা লাভবান হচ্ছেন। দিনদিন চাষের জমি বাড়ছে।’
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ভুট্টা চাষে জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হয়েছে। কৃষক পরিবারগুলো দিন দিন স্বচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে। পরিত্যক্ত জমি ফেলে না রেখে কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন
আপন দেশ/আরএস/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।