ছবি : সংগৃহীত
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার (১ এপ্রিল)। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের ‘মধুমহলে’ প্রবেশ করবেন খুলনার কয়রার পাঁচ সহস্রাধিক মৌয়াল। টানা দুই মাস বনের নির্দিষ্ট স্থান থেকে মোম ও মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তারা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে খুলনা রেঞ্জে এক হাজার ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য এক হাজার ৬০০ টাকা ও মোমের জন্য দুই হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে মৌয়ালদের।
কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মঠবাড়ি, গড়িয়াবাড়ি, পাথরখালী, কাটকাটা, হরিহরপুর এলাকার মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়রা উপজেলা থেকে এবার চার-পাঁচ হাজার পেশাদার মৌয়াল যাবেন মধু সংগ্রহ করতে। তবে মৌসুম শুরুর আগেই চোর চক্র ‘মধুমহলে’ হানা দেয়ায় মধু কম পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। স্থানীয় মৌয়ালরা মধু আহরণের ক্ষেত্রকে মধুমহল বলে থাকেন।
মৌয়ালরা জানান, মৌসুমের শুরুতে সুন্দরবনে খলিশা ফুলের মধু আসে। এর পর আসে গরান এবং সবশেষে আসে কেওড়াসহ অন্যন্য ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির ফুলের মধুর মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো খলিশার মধু। সুন্দরবনে গিয়ে এই মধু ভালো পাওয়া গেলে লাভ হয়। কম পাওয়া গেলে লোকসানের শঙ্কা থাকে।
মৌয়াল আলতাফ হোসেন (৪৪) বলেন, ‘এবার বন থেকে মাছ ও কাঁকড়া শিকারের আড়ালে আগাম মধু কেটেছে চোর চক্র। তাই মধু কেমন হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’ শঙ্কা থাকলেও প্রতিবারের মতো এবারো তিনি দল নিয়ে মধু সংগ্রহে যাবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন <> মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন আটকে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ
মৌয়াল মনিরুল ইসলাম জানান, এক মৌসুমে মধু আহরণ করতে একেকজন মৌয়ালের খরচ হয় ১৫ থকে ২০ হাজার টাকা। স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়েই এসব খরচ মেটাতে হয় তাদের। তবে মধুমহলে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মধু না পেলে লোকসান গুনতে হবে। তখন তাদের ঋণের বোঝা টেনে বেড়াতে হবে।
এবার প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন মৌয়াল অবস্থান করতে পারবেন। একজন মৌয়াল ১৪ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কেজি মধু ও ১৫ কেজি মোম আহরণ করতে পারবেন। টানা ১৪ দিনের বেশি কেউ সুন্দরবনে অবস্থান করতে পারবেন না বলে জানান সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মহসীন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের পক্ষে থেকে মৌয়ালদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সংরক্ষিত অভয়ারণ্য থেকে মধু আহরণ করা যাবে না। এ ছাড়া মৌয়ালরা মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুণ্ড, মশাল বা কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো অবস্থাতেই মৌচাকের সম্পূর্ণ অংশ সংগ্রহ করা যাবে না। এসব নির্দেশনা অমান্য করলে তাৎক্ষণিক তার অনুমতি বাতিল করা হবে।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।