Apan Desh | আপন দেশ

সুন্দরবনের একই জায়গায় কেন বারবার অগ্নিকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৭ মে ২০২৪

আপডেট: ১৩:৩২, ৭ মে ২০২৪

সুন্দরবনের একই জায়গায় কেন বারবার অগ্নিকাণ্ড

ছবি : সংগৃহীত

সুন্দরবনে গত ২৩ বছরে প্রায় ৩২ বার অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। শঙ্কার বিষয়, সবগুলো অগ্নিকাণ্ড পূর্ব বনবিভাগের আওতাধীন ম্যানগ্রোভ বনের মাত্র পাঁচ শতাংশ এলাকায় হয়েছে।

অবস্থাদৃষ্টে দেখা যায়, প্রতিবার আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও আসে, কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। 

বন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, পলি পড়ে বনভূমি উঁচু হওয়ার কারণে অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ শিকারের জন্য বনের ভেতরে ইচ্ছাকৃতভাবে এই আগুন লাগানো হয়।

স্থানীয় ও বনবিভাগ সূত্র জানায়, ধূমপান শেষে সিগারেটের ফিল্টার যেখানে-সেখানে ফেলা এবং কাদায় লুকিয়ে থাকা মাছ ধরার জন্য ঝোপের ভেতরে জেলেদের দেয়া আগুনই পূর্ব বনবিভাগের অধীনে থাকা বনে আগুনের মূল কারণ। তারা জানান, পূর্ব বনবিভাগে মৎস্যচাষ নিয়ন্ত্রণ করে প্রভাবশালীরা। কিছু নালা ও খালে মিঠা পানির মাছ চাষ করা হয়। দাবি করা হয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও মৌয়ালরা মৌমাছি তাড়ানোর জন্য ধোঁয়া দিতে গিয়ে অনেক সময়ই বনে আগুন ধরিয়ে ফেলেন।

যদিও মৌয়ালরা জানান, পূর্ব বনবিভাগের এলাকায় খুব কম মধু পাওয়া যায়। বেশিরভাগ মধু সংগ্রহ করা হয় পশ্চিম বনবিভাগ থেকে এবং গত ২৩ বছরে পশ্চিম বনবিভাগের এলাকায় অগ্নিকাণ্ড হয়নি। 

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, পলির কারণে পূর্ব বনবিভাগে জমি উঁচু হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার প্রভাব মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা যেকোনো ম্যানগ্রোভ বনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটা সুন্দরবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বনের অনেক অংশে পানি ঢুকতে পারে না। বনের ভেতরে সেইসব জায়গায় অনিয়মিত পানি প্রবেশের কারণে সেখানে বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন আসছে। শুধু নদীতে নয়, বনের তলের উচ্চতাও বেড়েছে।

মাটিতে জমে থাকা শুকনো পাতা পচে এক ইঞ্চি থেকে এক ফুট পর্যন্ত পুরু স্তর তৈরি করেছে, যেখানে দীর্ঘসময় আগুন জ্বলতে পারে, যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, শুষ্ক মৌসুমে বন ও এর আশেপাশের মানব বসতির মাঝে থাকা প্রাকৃতিক সীমানা—সরু নালা ও খাল—আর থাকে না। এর ফলে বনে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন <> দেশের সম্ভাব্য ১৫১ জিআই পণ্যের তালিকা প্রস্তুত

মিহির কুমার দো বলেন, জেলেরা খুব একটা ঝোপে আগুন দেয় না। পুরো সুন্দরবনে জেলেরা মাছ ধরলেও সব জায়গায় আগুন লাগে না। বনের মাত্র পাঁচ শতাংশ এলাকায় আগুন লাগে। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এবং একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সবগুলো অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এসব এলাকা জনবসতির বেশ কাছাকাছি এবং মানুষ সহজেই যেখানে যেতে পারে। সেখানে প্রচুর মিঠা পানি ও মাছও পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, জোয়ারের সময় বনের ভেতরে পানির সঙ্গে মাছও আসে, বিশেষ করে স্বাদু পানির মাছ। ম্যানগ্রোভ বনে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায় না। তাই চ্যানেল ও খালের ধারে ঝোপঝাড়ে আগুন ধরিয়ে জমি পরিষ্কার করে রাখে, যাতে সেখানে কাদায় আটকে যাওয়া মাছ সহজে ধরা যায়।

মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বনবিভাগ সহজেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারে, যোগ করেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, বারবার আগুন লাগার পেছনে প্রশাসনের গাফিলতি অন্যতম কারণ। আর আগুন লেগে যাওয়ার পরে গুরুত্ব দিয়ে সেটি নিবারণ করতে অবহেলাও ছিল।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত এ সময়ে বনে যাই না। এখন বনের চেহারা অন্যরকম। চারদিকে ফুল থাকে, নতুন পাতা গজাচ্ছে, কেওড়া খলিসা ফুলের সুবাস। এ সময়টায় লোকজন মধু সংগ্রহে যায়—মার্চ থেকে জুন। যেহেতু সাধারণ মানুষের পদচারণা বাড়ে, সেক্ষেত্রে এসময় নজরদারি দরকার। বন মনিটরিং ও চেক করে আগুনের কোনো উৎস যেন না থাকে, সেটি নিয়মিত দেখা দরকার।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল কবির বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে গিয়ে বনজীবীরা বিড়ি-সিগারেটের আগুন নেভায় না, আবহাওয়া তপ্ত, সব মিলিয়ে অনেক সময় আগুন লাগে। প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি, এ জন্য আমরা বনজীবী ও স্থানীয়দের সচেতন করেছি। সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। আগুন প্রতিরোধ সম্ভব।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়