ছবি : সংগৃহীত
কৃষকের জন্য কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (কেআইবি)। আমাদের কৃষকেরাই মাথার ঝাম পয়ে ফেলে ফলান ভিবিন্ন ফল ও ফসল। অথচ কৃষকের অংশগ্রহণ ছাড়াই শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কেআইবি চত্বরে তিন দিনের ফল মেলা শেষ হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলায় কৃষি উদ্যোক্তা, ফল চাষি, রপ্তানিকারক ও বাজারজাতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, চাষির পরিবর্তে ফল দোকানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধিক্য দেখা গেছে মেলায়।
ফার্মগেটের কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে (বিএআরসি) ফল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ফল চাষ, উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও বাজারজাতে ভূমিকার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয় ঘটা করে। সে পুরস্কারেও উপেক্ষিত প্রকৃত চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তারা।
এবারের মেলায় ঘোষিত এগারোটি পুরস্কারের মধ্যে পাঁচটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তির দখলে। অন্নান্য বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ২২-২৩ জনকে পুরস্কার দেয়া হতো। মেলায় ছাদবাগান, ফল বাগান সৃজন, ফল গাছ রোপণ, ফল বাজারজাতকরণ, শ্রেষ্ঠ জেলা, ফল চাষ সম্প্রসারণে বেসরকারি সংগঠন ক্যাটেগরিসহ শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল।
সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মেলায় স্টল প্রদর্শনের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার লাভ করে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে পুরস্কারে ভূষিত হয়, কাফকো এগ্রো; ফার্মি এগ্রো, চিটাগাং মেরিডিয়ান এগ্রো। ফল উৎপাদন ও বাণিজ্যিকীকরণে অবদানের জন্য সোহেল রানা, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং হারুন অর রশিদকে (মুসা) পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ফল উৎপাদন ও সম্প্রসারণে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুর রহিম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হককে। এবার পুরস্কারের সংখ্যা ও ক্যাটেগরি ছোট করা হয়েছে। এতে হতাশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত পাবনার ঈশ্বরদী মামণি খামারের মালিক বাদশা (পেঁপে বাদশা)। একবার তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের রৌপ্য পদকেও ভূষিত। তিনি পেঁপে, শরিফা, পেয়ারাসহ ৩২টি উদ্যান ফসলের বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন।
বাদশা বলেন, ফল চাষে ব্যাপক অবদান রাখলেও মেলায় তিনি দাওয়াত পাননি। তার আশা ছিল, ঢাকার ফল মেলায় নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্টল দেবেন। কিন্তু সেই সুযোগ ছিল না। মেলা এবার ঢাকার ফুটপাতের দোকানদারদের দখলে ছিল। ফল উৎপাদনে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান, সে চাষিরা পুরস্কারেও উপেক্ষিত।
‘ফল মেলায় কৃষক নেই, দোকানির আধিক্য’ শিরোনামে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রকাশ প্রসঙ্গে সমাপনী অনুষ্ঠানে কৃষি সচিব ওয়াহিদ আক্তার বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সতেরটি প্রতিষ্ঠান আছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানকে স্থান দেওয়া হয়েছে। ফল বিক্রেতাদের স্টল বেশি দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ফল উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের মধ্যে মেলবন্ধনের জন্য বিক্রেতাদের স্টল দিয়েছি।
ফল মেলায় পুরস্কার কমিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলতে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তোদের কোন মন্ত্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অন্য বছর ৮০টিরও বেশি স্টল থাকলেও এবার সরকারি-বেসরকারি ছিল ৬৩টি। বড় উদ্যোক্তা, প্রান্তিক চাষি, স্বপ্ন, মীনা বাজার ও আগোরার মতো সুপারশপ এবং রপ্তানিকারকরা অংশ নিয়েছেন অন্য বছর। এবার সেই রকম কেউ ছিলেন না। মূলত ফার্মগেটের আশপাশের ফল দোকানিরা মেলায় বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ নেন। ফলে পুরস্কারের সংখ্যাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় ফল মেলা সফল করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার জন্য এক কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় ১২ হাজার টাকা করে মোট সাত লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আর উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ রাখা হয় সাত হাজার টাকা করে মোট ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাকি প্রায় কোটি টাকার উপরে খরচ করা হয় ঢাকার প্রধান ফল মেলায়। এর মধ্যে মেলা উদযাপন বাস্তবায়ন উপকমিটির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫০ লাখ টাকা। প্রচার প্রকাশনা যেমন- ফল মেলা উপলক্ষে পোস্টার, ব্যানার তৈরি টাঙ্গানো খাতে খরচ করা হয়েছে ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
আপন দেশ/এইউ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।