Apan Desh | আপন দেশ

বরেন্দ্র এলাকায় হাহাকার 

মাটির নিচের পানি কোথায় গেল?

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৬ জুন ২০২৪

আপডেট: ১৫:৪২, ২৬ জুন ২০২৪

মাটির নিচের পানি কোথায় গেল?

ছবি: সংগৃহীত

দেশের উত্তরের পাঁচটি জেলার বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত বরেন্দ্র এলাকায়। মাত্র ৪০ বছর আগেও এ অঞ্চলে পানি ছিল সহজলভ্য। এখন তার অনেক স্থানেই পানির সংকট। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। বিভিন্ন স্থানে অকেজো হয়ে পড়েছে সরকারি ডিপ টিউবওয়েল।

সরকারের গবেষণা বলছে, বরেন্দ্রর ৪০ শতাংশ এলাকা রয়েছে উচ্চ পানির সংকটে। এর দুটো কারণ- কৃষিতে ব্যাপকভাবে মাটির নিচের পানি উত্তোলন আর সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়া।

কিন্তু এমন অবস্থা কীভাবে তৈরি হলো?

রাজশাহীর তানোরে ছোট্ট একটি গ্রাম। নাম কামারপাড়া। সেখানেই একটি ডিপ টিউবওয়েলের সামনে কিছু মানুষের জটলা। তারা সকলেই এসেছেন পানি নিতে। জটলার মধ্যে অবশ্য কোন পুরুষ নেই। সকলেই নারী। আছে কয়েকজন শিশুও। সেখানেই দেখা হয় আদিবাসী নারী জাস্টিনা হেমব্রমের সঙ্গে। কোমরে বাধা মেডিকেল বেল্ট।

আরও পড়ুন>> ভূগর্ভের পানি শেষের পথে!

জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, বছরখানেক আগে পানি বহন করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান। আঘাত পান কোমরে। এরপরই চিকিৎসকের পরামর্শে কোমরে বেল্ট পরেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিরিয়াল মেনে পানি সংগ্রহের পালা আসে জাস্টিনার। মাথায় পাতিল আর হাতের কলসে পানি নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরেন তিনি।

তার পেছনে সঙ্গী হলেন পাড়ার অন্য বাসিন্দারাও। যাদের এ পানি সংগ্রহের যুদ্ধ চলে প্রতিদিন। রোদ-বৃষ্টি কিংবা ঝড়, মুক্তি নেই কোন কিছুতেই। এমনকি বাড়ির শিশুরাও অংশ নেন পানি সংগ্রহে। জাস্টিনা হেমব্রম বলেন, ‘আমার কোমরে ব্যথা কিন্তু করার কিছু নেই। বাসা এক কিলোমিটার দূরে। বাঁচতে হলে আমাদেরকে এভাবেই পানি নিয়ে যেতে হবে প্রতিদিন।’

আরও পড়ুন>> সিলেটে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট

তার ভাষায়, বাড়িতে পুরুষ মানুষ থাকলেও তারা খুব সকালেই কাজে চলে যান। তারা যদি পানি আনতে যায়, তাহলে কাজে দেরি হবে। তখন কাজ পাবে না। এজন্য খুব সকালেই কাজে যায়। তাই নারীরা পরে পানি আনতে যান।

জাস্টিনা হেমব্রম থাকেন তানোরের মাহলপাড়ায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় পাশাপাশি খোলামেলা পরিবেশে কয়েকটি ঘর। যেগুলোতে আলাদা আলাদা পরিবার বাস করে। একটি টিউবওয়েল থাকলেও সেটায় পানি ওঠে না বহুদিন। ফলে এখানকার সকলেই খাবার পানি আনেন দূরের ডিপ টিউবওয়েল থেকে। সেটা দিয়েই চলে রান্না, গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে সংসারের সকল কাজ।

প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন খাবার পানি সংগ্রহ করেন জাস্টিনা: ছবি: বিবিসি

পানির সংকট নিয়ে চানতে চাইলে বাসিন্দা রুবিনা বেগম তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘শান্তিমতো গোসল করতে পারি না। গত বর্ষার সময় দূরের একটা পুকুরে গিয়ে গোসল করেছিলাম। ওটাই শেষ। বর্ষার পরে পুকুরের পানি কমে যায়, নোংরা হয়ে যায়। পুকুরের পানি দিয়ে ধানক্ষেতে সেচ দেয়। পানি থাকে না। তাই গোসলও করা যায় না। এখন আধা বালতি পানি দিয়ে কোনরকম গোসল হয়।’

আরও পড়ুন>> আলীকদমে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

তিনি আরও বলেন, ‘ডিপ টিউবওয়েল থেকে চার বালতি পানি আনি প্রতিদিন। এ পানি দিয়েই পরিবারের তিনজনের গোসল, রান্না, খাওয়া সব সারতে হয়। আর কাপড় এবং থালা-বাসন ধুতে হয় পুকুরের নোংরা পানিতে।’

পাশের ঘরেই বারান্দার সামনে চার বছরের ছোট্ট ছেলের শরীর ভেজা কাপড়ে মুছে দিচ্ছিলেন আরিফা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই টাইফয়েড থেকে সেরে উঠলাম। ডাক্তার বলছে, শরীরে পানি কম আছে। এখন বাচ্চাটারও ঠিকমতো যত্ন নিতে পারি না। গরমে বাসায় যে ভালোভাবে গোসল করাবো সেই পানিটা নেই। আরও দুটো বাচ্চা স্কুলে যায়। তাদেরকেও অনেক সময় পানি না থাকায় সকালের নাস্তা খাওয়াতে পারি না। না খেয়েই স্কুলে যায়।’

‘পানির অভাবে ধান মরে গেল, পানি পেলাম না’

বরেন্দ্র এলাকায় কৃষকদের বিশেষত শুষ্ক মৌসুমের বোরো ধানের জন্য নির্ভর করতে হয় সরকারি সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিপ টিউবওয়েলের উপর। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ের ডিপ টিউবওয়েল থেকেও পানি নিতে পারেন কৃষকরা। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই পানি নিতে বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয় কৃষকদের।

আবার চাহিদা বেশি হওয়ায় কোন কোন এলাকায় শেষ পর্যন্ত পানি পান না এমন কৃষকও আছে। তাদেরই একজন তানোরের দবিরুল ইসলাম। জানালেন, চার বিঘা জমির দুই বিঘা আবাদ করেছেন, আর বাকি দুই বিঘা আবাদ করতে পারছেন না। কারণ পানি নেই।

শুকিয়ে গেছে নদী, ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। ছবি: বিবিসি

তিনি বলেন, ‘পানি নেই, আবাদও করতে পারিনি। ঘুরলাম পানির জন্য। ডিপ টিউবওয়েলের অপারেটর বললো আজ দিবো, কাল দিবো, চারদিন পরে দিবো। এমন করতে করতেই পানির অভাবে ধান মরে গেল, পানি পেলাম না। পরে ধান যা বেঁচে ছিল কেটে ফেলেছি।’

তার মতোই এ বছর ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুন্ডুমালার আরেক চাষী মাইকেল। বলেন, ‘পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। শুরুতে পানি পাচ্ছিলাম। কিন্তু পরে ডিপ থেকে আর পানি উঠছিল না। ফলে পানি দিতে পারিনি। ধানে তখন পোকা ধরলো। অনেক ধান চিটা হয়ে গেছে। বিঘায় মনে করেন পাঁচ মনের বেশি ধান কম পাবো এবার।’

মাটির নিচের পানি কোথায় গেল?

রাজশাহীর তানোরে কৃষকসহ সকলেই বলছেন, এখানে যে পানির তীব্র সংকট তার মূল কারণ মাটির নিচে যথেষ্ট পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এখানে পানি আসলে মাটির কতটা গভীরে?

আরও পড়ুন>> প্রতিটি সিগারেট নষ্ট করে ৩.৭ লিটার পানি

তানোরের উঁচাডাঙ্গা গ্রাম। এখানে মাটির নিচে পানির স্তরের গভীরতা মাপার জন্য ডিপ টিউবওয়েলের পাইপ বসিয়েছে বেসরকারি একটি এনজিও। সেখানে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে পানির গভীরতা মাপেন সাইমন মারান্ডি। 

গত ২০ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, ওদিন পানির নিম্নস্তর পাওয়া গেছে ১১৬ ফুট নিচে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পানির স্তর ছিল ১০৬ ফুট গভীরে। অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছরে পানির স্তর নেমেছে ১০ ফুট।

সাইমন মারান্ডি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে মাটির নিচে পানির অবস্থা একটু উন্নতি হয়। বর্ষায় হয়তো ১৫ সেন্টিমিটার উন্নতি হয়ে গেল, শুষ্ক মৌসুমে আবার সেটি নামা শুরু করল। নামতে নামতে পরের বৈশাখে দেখা যায় ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার নিচে চলে যায়। পানি এখানে নিচে নামার হারটাই বেশি।’

রাজশাহীর তানোরে মাটির নিচে পানির গভীরতা মেপে দেখছেন সাইমন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে পানির সংকট বেশি দেখা যায় মূলত বরেন্দ্রর উচু এলাকাগুলোয়। রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ পাঁচটি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বরেন্দ্র এলাকা। যেগুলো গত দুই দশকে পানি সংকট তীব্র হয়েছে। সর্বশেষ সরকারের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ওয়ারপোর জরিপে দেখা যায়, বরেন্দ্রর ২১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭ ইউনিয়নই উচ্চ পানির সংকটে রয়েছে। এমনকি ১৯৯০ এর দশকের তুলনায় এখনকার সময়ে পানি সংকটাপন্ন এলাকার সংখ্যাও বেড়েছে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাতেও বরেন্দ্র এলাকায় পানির গড় নিম্নস্তর নামতে দেখা গেছে। বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯৪ সালে মাটির নিচে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৩৫ ফিট। সেটা ২০০৪ সালে ৫১ ফিটে নেমে আসে। ২০১৩ সালে পানির গড় নিম্নস্তর পাওয়া যায় ৬০ ফিট নিচে। ২০২১ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে পানির গড় স্তর ৭০ ফিটের নিচে পাওয়া যাচ্ছে।

তবে কোন কোন এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেগুলোতে প্রায় ২০০ ফিট নিচেও পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক স্থানেই সরকারের বসানো ডিপ টিউবওয়েল পানির নাগাল না পেয়ে এখন বিকল অবস্থায়। 

পানির সংকট কীভাবে তৈরি হলো?

বরেন্দ্র এলাকায় সামগ্রিকভাবেই ৪০ বছর আগে খুব সহজেই পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সেটা কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এর উত্তরে কয়েকটি কারণ বের হয়ে আসছে।

এক. বরেন্দ্র এলাকায় নব্বইয়ের দশকের আগেও মূলত একটি ফসলের চাষ হতো। সেটা হলো আমন ধান। কিন্তু তখন থেকে ব্যাপকভাবে তিন ফসলের চাষ শুরু হয়। এ চাষাবাদের পুরোটাই আবার বলা যায় ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভর। বোরো চাষে পানির প্রয়োজন আরও বেশি হয়। সবমিলিয়ে চাষাবাদের জন্য ব্যাপকভাবে পানি উত্তোলন শুরু হয়।

দুই. বরেন্দ্র এলাকার গবেষকরা বলছেন, দেশের অন্যান্য এলাকার গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এ এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হয়। আবহাওয়া অধিদফতরে তথ্য নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান একটি গবেষণা করেছেন।

আরও পড়ুন>> বিশুদ্ধ পানির প্রকল্পে গোয়ালঘর

সেই গবেষণায় তিনি তথ্য দিচ্ছেন, ৮০ এবং ৯০ দশকের তুলনায় এর পরের দুই দশকে বরেন্দ্রর পানি সংকটে থাকা এলাকাগুলোতে গড় বৃষ্টিপাত কমেছে ৪০০ মিলিমিটার। একদিকে পানির উত্তোলন বেড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় মাটির নিচে পানির পূনর্ভরণ হয়নি। ফলে পানির স্তর আরও নিচে নেমেছে।

তিন. আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, বরেন্দ্র এলাকার মাটি উঁচু। অন্যদিকে একে ঘিরে থাকা নদীগুলো তুলনামূলক নিচে। ফলে মাটিতে বৃষ্টির পানি নিচে নামলেও সেটা ভূ-অভ্যন্তরভাগ দিয়েই দ্রুত গড়িয়ে নদীর নিচে চলে যায়। এছাড়া নদী-নালা-খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেগুলোতেও পানি জমে থাকে না।

পানির স্তরের নাগাল পেতে মাটির গভীরে বসানো শ্যালো মেশিন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বরেন্দ্র গবেষক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এখানে আসলে পানি নির্ভরতা বেশি। এখানে শুষ্ক মৌসুমও অনেক লম্বা। কৃষিকে বাঁচাতে মাটির নিচের পানিই ব্যবহার হয়। পানির আধার তো আনলিমিটেড না। ফলে ২০ বছর আগেও যে অবস্থা ছিল, এখন সে অবস্থা নেই। এখন সব ফ্যাক্টর যোগ হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এটা চলতে থাকলে কোথাও কোথাও অচিরেই পানিশূন্য অবস্থা তৈরি হবে।’

তার মতে, এ এলাকায় প্রচুর গাছপালা রোপন করতে হবে, যেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা যায়। একইসঙ্গে নদী-নালা-খাল বিলের গভীরতা বাড়াতে হবে। পুকুর, খালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যেন বৃষ্টির পানি দীর্ঘদিন জমা থাকে এবং সেটা কৃষির কাজে ব্যবহার করা যায়।

সমাধান কোথায়?

বরেন্দ্র এলাকায় পানি সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থাটি নীতি কৌশল ঠিক করা ও প্রয়োগে ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু পানি সংকট নিরসনে সংস্থাটি কী করছে?

এক্ষেত্রে বরেন্দ্র এলাকায় খোঁজ নিয়ে মোটাদাগে দুটি বিষয় দেখা যাচ্ছে-

এক. ২০১৫ সালের পর থেকে বরেন্দ্র এলাকায় সরকারিভাবে ডিপটিউবওয়েল বসানোর কার্যক্রম বন্ধ রেখছে বিএমডিএ। উদ্দেশ্য মাটির নিচের পানি যেন কম ব্যবহার হয়।

দুই. একইসঙ্গে পদ্মা, মহানন্দা, করতোয়াসহ বিভিন্ন নদী থেকে পানি এনে রাবার ড্যামে আটকে কৃষিতে সেচের ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। কিন্তু এরপরও বরেন্দ্র এলাকায় কৃষিতে পানির যে চাহিদা সেটা পূরণ হচ্ছে মাত্র ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ৮৭ শতাংশ পানি এখনও মাটির নিচ থেকেই উত্তোলন করা হচ্ছে।

বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা আছে যে, মাটির উপরের পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশে নিয়ে আসবো। তখনও ভূগর্ভস্থ পানিতে নির্ভরতা থাকবে ৭০ শতাংশ। কেননা এ শতভাগ পানির চাহিদা সারফেস ওয়াটারে মেটানো সম্ভব না, যেহেতু এর উৎস নেই। অর্থাৎ এখানে পানির সোর্স এভেইলেবল না। শতরাং আমরা এখানে একটা যৌথ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছি। গ্রাউন্ড ওয়াটারও থাকবে, সারফেস ওয়াটারও থাকবে।’

কিন্তু এখন মাটির উপরে যে পানি পাওয়া যাচ্ছে সেটা কোথা থেকে আসছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এ পানি আনা হচ্ছে বিভিন্ন নদী থেকে। পদ্মা, মহানন্দা, করতোয়া থেকে পাইপ দিয়ে পানি আনা হচ্ছে। এছাড়া দিনাজপুরের আত্রাই নদীর পানি আনাসহ এরকম কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মাটির নিচের পানির উপর চাপ কমানো। এছাড়া এখানে ধান আবাদে অনেক পানি দরকার হয়।

বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ। ছবি: সংগৃহীত

পানির সংকটে বরেন্দ্র এলাকায় অবশ্য ইতোমধ্যেই কৃষকদের অনেকে বিকল্প কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এটা একটা বড় পরিবর্তন। আগে ধান চাষ হতো এমন জমিতে এখন আম, মাল্টা, ড্রাগনের বাগান যেমন গড়ে উঠছে, তেমনি সরিষা, তিলসহ ভুট্টা চাষেও আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। যেগুলোতে পানির ব্যবহার কম।

এছাড়া কম পানির সেচে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তিও কাজে লাগাচ্ছেন অনেকে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, এসবের ব্যপকতা কম। ফলে এখানকার কৃষি এখনও মাটির নিচের পানি নির্ভর।

সবমিলিয়ে একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির নির্ভরতাও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো যায়নি। ফলে জাস্টিনা হেমব্রমের মতো মানুষ- যারা পানির সংকটে আছেন তাদের নিত্যদিনের সংকটও অব্যাহত থাকছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়