ননী ফল-(আপন দেশ)
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ননী ফল। নানা রোগের মহৌষধ হিসেবে এ ফল ব্যবহার হয়। উপজেলার পৌংলি এলাকার উদ্যোক্তা বাবুল আহমেদ এ ফল চাষে প্রশংসা পাচ্ছেন।
জানা যায়, ননী ফলের রস খেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা নিরসন হয়। অনেকে এটাকে পেইন কিলার বলে অভিহিত করে থাকেন। এটা মূলত আফ্রিকা অঞ্চলের একটি ফল। তবে ফলটি ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়।
এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। ননী গাছে বারো মাস ফল ধরে। যশোর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায় এ ফলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। দেশের আবহাওয়া ননী ফল গাছ চাষের উপযোগী। তাই অনেকেই ননী ফলের বাণিজ্যিক চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
যদিও এখন পর্যন্ত এ ফলের গুণাগুন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা ভালো ধারণা নেই।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ননী ফলের রস বোতলজাত জুস করে বাজারে বিক্রি করছে। ননী ফলে ভিটামিন এ, সি, ই, বি, বি-২, বি-৬, বি-১২, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড, প্যাণ্টোথেনিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, অন্যান্য মিনারেলসহ প্রায় ১৫০টিরও বেশি ওষুধি গুণে পরিপূর্ণ রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ননী ফলের রসে উচ্চ রক্তচাপ কমে, শারীরিক শক্তি বাড়ে, প্রদাহ ও হিস্টামিন প্রতিরোধ করে। ননী ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
দুই বছর আগে ৩৫ শতাংশ জায়গা ২০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে উদ্যোক্তা বাবুল আহমেদ ননী ফলের বাগান করেছেন। বাগানের এক পাশে ননী ফল গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি। বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে ননী ফল গাছ রোপন করেছেন।
বর্তমানে এ ফল বাজারে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটি চারা গাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। অনেকেই কৌতুহলী হয়ে তার ওই বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান।
উদ্যেক্তা বাবুল আহমেদ জানান, তার বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলায়। একজন হাকিমের মাধ্যমে তিনি এলেঙ্গায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এলেঙ্গায় ভাড়াবাসায় বসবাস করছেন। হাকিমী ব্যবসাসূত্রে তিনি ননী ফল ও গাছের সাথে পরিচিত হন। ফলটির গুণাগুন জানতে পেরে তিনি ননীগাছ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বিস্তারিত জানতে তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশ নেন। সেখান থেকে দেশে ফিরে এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় দুই বছর আগে ৩৫ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে কিছু চারা কিনে ননী ফল গাছের বাগান তৈরি করেন। বাগনটি সুরক্ষিত রাখতে তিনি পুরো জায়গায় টিনের বেড়া দেন।
তিনি জানান, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ননী ফল ও গাছের গুণাগুণের কথা জানতে পারেন। ভারতের কলকাতার ঝাউতলা নামক স্থানে ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে অংশ নেন। দেশে ফিরে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ৫০টি ননী গাছের চারা কিনে এনে রোপণ করেন। তিনি আরও জানান, এ ফলের গুণাগুন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা ভালো ধারণা নেই। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। ননী ফলের হাজারো গুণ থাকায় আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই বাগান দেখতে আসেন।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা মামুন বলেন, উদ্যোক্তা বাবুল হোসেন নিজ উদ্যোগে ননী ফলের বাগান করছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ননী ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এ ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এগুলো সংগ্রহ করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে জানা গেছে, এ ফল ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরোনো বাতের ব্যথা সারাতে এ গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে উদ্যোক্তা বাবুল হোসেনকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
আপন দেশ/কেএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।