ছবি: আপন দেশ
পলিথিনে সয়লাব সারা দেশ। যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। দূষণ বাড়ছে পরিবেশের। চরম হুমকিতে জনস্বাস্থ্য। লাগাম টানতে পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে ড. ইউনূস সরকার। গত ১ নভেম্বর থেকে সর্বত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মনিটরিং চলছে। আগামীকাল রোববার থেকে সাঁড়াশি অভিযান।
তথ্যমতে, তারপরও উৎপাদন থেমে নেই। যেখান থেকে সরকার পরিচালিত হচ্ছে তার কয়েক কিলোমিটার দূরেই প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ৩৫ টন পলিথিন। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিকরা বখরা দিয়ে চালাচ্ছে কারবার। এ বখরা যায় প্রশাসন ও পুলিশের পকেটে।
পলিথিন তৈরি, বিক্রি আর পরিবহনের চিত্র দেখতে হলে যেতে হবে রাজধানীর পুরোনো ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, উর্দ্দুরোড, জয়নাগরোড, চুরিহাট্টা,বংশাল, পোস্তা বালুঘাট এলাকায়। উৎপাদকরা জানিয়েছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ পলিথিন যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।
পলিথিন ব্যাগ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টন পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। বাস্তবে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। রাজধানীর চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের ৬৪ জেলা ও বিদেশে।
গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেট করে পলিথিনের ব্যবসা করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিমাসে/সপ্তাহে বখরা পেতো স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দেদারসে পলিথিন উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পহেলা নভেম্বর থেকে মার্কেট বাজার মনিটরিং শুরু করেছে। এখন শুধু ব্যবসায়িদের সতর্ক করা হচ্ছে। সরকার হার্ড লাইনে। আগামী রোববার ৩ নভেম্বর থেকে শপিং মলগুলোতে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ওই সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পরিবেশ গঠিত স্ট্রাইকিং টিম নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারকারী ব্যবসায়িদের জেল জরিমানা করা হবে। এ উদ্যোগকে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ সাধুবাদ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন<<>> পলিথিন উৎপাদনকারী ধরতে রোববার থেকে অভিযান
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও দেদারসে ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মাছ, গোশত থেকে শুরু করে সবজি এমনকি তরল দুধ ও তেল বিক্রিতেও পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। শুধু বাজারই নয়, শপিংমলসহ অলিতে-গলিতে থাকা দোকানগুলোতে দেদারসে পণ্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাগ। ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। কমেছিল পলিথিনের ব্যবহারও।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারকে অলিখিতভাবে বৈধতা দেয়। পুরান ঢাকার যে সব ব্যবসায়ী আগে গোপনে প্লাস্টিকের আড়ালে পলিথিন উৎপাদন করতো তারা আওয়ামী লীগের আমলে প্রকাশ্যেই উৎপাদনে এসেছে। দলটির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যেই উৎপাদন শুরু করে তারা। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে শুরু করে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সব ধরনের কর্মকর্তা এবং পুলিশকে মাসোহারা দিতে হতো বলে ব্যবসায়ীরা জানায়। ব্যবসায়িদের ভাষ্য, দেশের চাহিদা পূরণ করে কয়েক বছর ধরে ভারতেও পাচার হচ্ছে পলিথিন। সেখানে পলিথিনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাই পথে পাচার করে আওয়ামী লীগের নেতারা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান,পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পলিথিনের অপব্যবহার মাটি, পানি ও বায়ুকে দূষিত করে। পলিথিন ড্রেনেজ সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের ড্রেনগুলোতে যখন পলিথিন ফেলে দেয়া হয় তখন সেগুলো না পচে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বন্ধ করে দেয়। পানি আটকে যায় এবং পানিকে দূষিত করে। কয়েক মাস পর পর ড্রেনগুলোতে পানি প্রবাহ বাড়ানোর জন্য পরিচ্ছন্ন অভিযানে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। এছাড়া পুকুর, নদী ও সমুদ্রে পলিথিন চলে গেলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। সেখানে বসবাসরত মাছ এসব পলিথিনকে খাদ্য হিসেবে মনে করে খেয়ে ফেলে। এতে মাছের মৃত্যুও হয়। পলিথিন মাছ এবং জলজ উদ্ভিদকে সংক্রমিত করে। জলজ উদ্ভিদের স্বাভাবিক চলার পথকেও ব্যাহত করে পলিথিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন যতদিন পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ না হয় ততদিন এ অভিযান চলবে। একটি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ শুরু করেছি। একবার বছর দুয়েকের জন্য প্রয়োগ হয়েছিল। মার্কেট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পলিথিন প্রায় উঠে গিয়েছিল। তারপর আর মার্কেট মনিটরিং ছিল না, এটা আবার বাজারে ফেরত এসেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের পর ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাজারে পলিথিন ব্যাগ ছিল না। তখন পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগের প্রচলন শুরু হয়। তাতে পাট শিল্পের অনেক উন্নতি হয়েছিল।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।