ছবি: আপন দেশ
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম একটি জেলা খাগড়াছড়ি। পাহাড়, ঝর্ণা, গুহা, নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অগাধ ভাণ্ডারে সমৃদ্ধ এ জেলা। পর্যটকদের কাছে এক অনন্য গন্তব্য খাগড়াছড়ি। এ জেলা শুধু প্রকৃতির নৈসর্গিক বৈচিত্র্যেই নয়। এর ঐতিহাসিক গভীরতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেও অনন্য।
খাগড়াছড়ির ইতিহাস: শাসন ও সীমানার বিবর্তন
ত্রিপুরা ও আরাকান শাসন- খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত খাগড়াছড়ি কখনো ত্রিপুরা আবার কখনো আরাকান রাজাদের অধীন ছিল। ত্রিপুরার রাজারা প্রায় ৩৬৩ বছর (৫৯০-৯৫৩ সাল) পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল শাসন করেন।
পরবর্তী ব্রিটিশ শাসন- ব্রিটিশ সরকার ১৭৬০ সালে চট্টগ্রাম এবং ১৭৮৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশ দখল করে। ১৮৬০ সালের ২০ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম জেলা থেকে আলাদা করে একটি স্বতন্ত্র জেলা ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৮ সালে খাগড়াছড়ি থানার মর্যাদা পায়। এরপর ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নামকরণের ইতিহাস
খাগড়াছড়ি নামটি এসেছে ‘খাগড়া’ নামক এক ধরনের গাছের বনের নাম থেকে। একটি ছড়া নদী খাগড়াছড়ি শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে। নদীর পাড়ে প্রচুর নলখাগড়া বন ছিল। এ বন থেকে ‘খাগড়াছড়ি’ নামটির উৎপত্তি। তবে একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে, এখানে ‘খাগড়াছড়ি; নামে একটি নদী ছিল। সে নদীপাড়ের খাগড়া বনের কারণেই জায়গাটির নাম খাগড়াছড়ি হয়ে ওঠে।
প্রশাসনিক কাঠামো ও সাধারণ তথ্যাবলি-
খাগড়াছড়ি জেলা বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলার একটি। ৭ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে জেলাটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। জেলাটি নয়টা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলা ৯টি হলো- সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, রামগড়, গুইমারা। এ জেলাটির আয়তন- ২৭৪৯.১৬ বর্গকিলোমিটার (দুই হাজার সাতশ উনপঞ্চাশ দশমিক ১৬ বর্গকিলোমিটার)
খাগড়াছড়ি জেলাটি উত্তরে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য- পূর্বে, রাঙামাটি- দক্ষিণে, চট্টগ্রাম- পশ্চিমে, ফেনী নদী- উত্তর, পশ্চিমে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য- জনসংখ্যা: ৭,১৪,১১৯ (সাত লাখ চৌদ্দ হাজার একশ উনিশ) ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী
খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রসমূহ
আলুটিলা গুহা- খাগড়াছড়ির অন্যতম রহস্যময় পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলা গুহা। এটি আরবারী পাহাড়ে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গুহা। প্রায় ৩৫০ ফুট দীর্ঘ এই গুহাটি। স্থানীয়দের কাছে "মৃত্যু গুহা" নামেও পরিচিত। গুহার অভ্যন্তরীণ পথ অন্ধকার ও সংকীর্ণ।
রিছাং ঝর্ণা- মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত রিছাং ঝর্ণা মারমা ভাষায় "রিং" অর্থ পানি এবং "ছাং" অর্থ উঁচু থেকে গড়িয়ে পড়া। এটি একটি মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি ঝর্ণা। ঝর্ণার স্রোতের শব্দ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে আসে।
নিউজিল্যান্ড পাড়া- খাগড়াছড়ি সদরের নিকটবর্তী একটি গ্রাম নিউজিল্যান্ড। এটি নিউজিল্যান্ড পাড়া নামে পরিচিত। পানখাইয়া পাড়া ও পোরাছড়ার অংশবিশেষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিউজিল্যান্ডের পরিবেশের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ায় এটি এ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
দেবতার পুকুর- দীঘিনালা উপজেলার অন্তর্গত দেবতার পুকুরটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের বিশ্বাস করে এই পুকুরটি দেবতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। পুকুরের জল কখনো শুকিয়ে যায় না।
মাইনী নদী- মাইনী নদী খাগড়াছড়ির প্রধান নদীগুলোর একটি। নদীর স্নিগ্ধ পরিবেশ এবং চারপাশের পাহাড়ি দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
প্রকৃতি ও সংস্কৃতি
খাগড়াছড়ি জেলার সৌন্দর্য যেমন প্রাকৃতিক। তেমনি সাংস্কৃতিকও। এখানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাঙালি ও অন্যান্য উপজাতির বসবাস। তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক ও উৎসব উদ্যাপন করে থাকে।
পর্যটকদের জন্য নির্দেশিকা
খাগড়াছড়ি ভ্রমণের জন্য শীতকাল বিশেষ উপযুক্ত। এখানকার পাহাড়ি পরিবেশ, ঝর্ণা ও গুহাগুলো প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।খাগড়াছড়ি জেলা ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মিশেলে গড়া একটি অঞ্চল। এটি দেবতার ও ইতিহাস প্রেমীদের জন্য অনবদ্য গন্তব্য।
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।