Apan Desh | আপন দেশ

ঢাকায় ফুলকপি ৩০ টাকা, ২ টাকাও পাচ্ছেন না কৃষক

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২০:২১, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

ঢাকায় ফুলকপি ৩০ টাকা, ২ টাকাও পাচ্ছেন না কৃষক

ছবি: আপন দেশ

ঢাকার বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অথচ একই ফুলকপি নওগাঁ জেলায় বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ টাকা দরে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতা নেই। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন জেলার ফুলকপি চাষিরা। বাজারে দাম না থাকায় ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করছেন চাষীরা। কেউ কেউ ফুলকপি বিক্রি করতে না পেরে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।

এদিকে রাজধানীর কল্যাণপুর, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রামে শীতকালীন সবজির দাম অনেক কম। গ্রামের বাজারে কৃষকরা সরাসরি পাইকারদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। সে একই পণ্য ঢাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আসে। তবে এ সবজি আসতে অনেক হাত বদল হয়। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

চুয়াডাঙ্গা-

চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি বছরে ফুলকপির আবাদ বেড়েছে। এতে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি। ফলে বাজারে শীতকালীন এ সবজির দাম নেই।
  
কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার অনেক বেশি ফুলকপি উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ফুলকপি কেনার মানুষ নেই। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সব কপি। বাধ্য হয়েই ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করেছি। পরবর্তী ফসলের জন্য মাঠ পরিষ্কার করা হচ্ছে। 
 
তিনি আরও বলেন, এবার ১০ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রায় আমার তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার।

লালমনিরহাট-

উত্তরবঙ্গের সবজি ভাণ্ডার বলে পরিচিত লালমনিরহাট। তবে এখানে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় থেকে ২ টাকা দরে। এতে তাদের উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। অনেকেই জমিতেই নষ্ট করে ফেলছেন ফসল। 

একজন কৃষক বলেন, এবার ফুলকপির দাম কমায় কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ফুলকপি আমরা মাঠেই নষ্ট করে ফেলছি। এছাড়া কোনো উপায় নেই। ৮০০ টাকা প্যাকেট বীজ কিনে এখন প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করছি ২ টাকা দরে। আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।

নওগাঁ-

নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ফুলকপি নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১-২ টাকায়। এরপরও কেউ কেউ অপেক্ষা করেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।

কৃষকরা বলছেন, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পেয়েছেন তারা। সে বিষয়টি ভাবনায় রেখে এ বছরও আবাদ করেছেন তারা। তবে ফুলকপির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না। সবজির দামে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতীয় এ সবজির উৎপাদন কম থাকায় দাম ছিল বেশ চড়া। বর্তমানে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে এমন ধস নেমেছে বলে মনে করছেন তারা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে জেলায় এ বছর ৬২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৭ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

পাইকারি ফুলকপির হাটে কপি বিক্রি করতে আসা কৃষক নওগাঁ সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড়ের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে কপি লাগাইছি। এখন পর্যন্ত লাগানো থেকে শুরু করে, কীটনাশক, সার, বীজ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। কপির একটা চারা ১ টাকা দামে কিনে লাগাইছি। প্রথম দিকে ২০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কিন্তু এখন দাম ১-৪ টাকা, তাও কিনতে চায় না। এ দামে কপি বিক্রি করে চারার দামই উঠছে না। 

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়