ছবি: আইএসপিআর
ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার পর অতিদ্রুত সময়ে উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ত্রাণ সামগ্রীসহ এই বাহিনীর ২১টি জাহাজ, নৌ কন্টিনজেন্ট, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ) প্রস্তুত রাখা হয়েছে ।
শনিবার (১৩ মে) আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবাইকে যাতে দ্রুত ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া যায়, সেই লক্ষ্যে ২১টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর এমপিএ ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নৌবাহিনীর সদস্যরা সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এরপর এমপিএ ও হেলিকপ্টারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাহাজ ও কন্টিনজেন্টসমূহ বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম ধাপে উদ্ধার কাজের জন্য বানৌজা সমুদ্র জয় ও বানৌজা ধলেশ্বরী কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ এলাকায়, বানৌজা শাপলান কুতুবদিয়া ও বহিঃনোঙ্গর এলাকায়, বানৌজা হাতিয়া এবং এলসিটি ১০৩ সন্দ্বীপ ও হাতিয়া সংলগ্ন এলাকায়, এলসিভিপি ১১ পটুয়াখালী এলাকায় এবং এলসিটি ১০৫ পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে খুলনার মোংলায় বানৌজা শৈবাল, বঙ্গবন্ধু, প্রত্যয়, স্বাধীনতা, প্রত্যাশা ও নির্মূল। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় বানৌজা অপরাজেয়, অতন্দ্র, সুরভী, অদম্য ও পদ্মাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে ঝড়ের তীব্রতা ও আঘাতের প্রকোপ পর্যবেক্ষণের পর প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় ধাপে নৌবাহিনীর অতিরিক্ত জাহাজ এবং কন্টিনজেন্টসমূহকে মোতায়েন করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই মুহূর্তে নৌবাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সতর্ক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবেই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, স্যালাইন ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে বিশেষ মেডিকেল টিম।
শনিবার সন্ধ্যার দিকেই কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে। ১৭০ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিঝড়টির কারণে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে ‘মোখা’ মোকাবেলায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যেই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। উপকূলীয় এলাকা জুড়ে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্রমাগত মানুষ আসতে শুরু করেছে। নারী, বয়স্ক, শিশু এবং গবাদি পশুসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে শুরু করছেন। এক ঘণ্টা পর পর আপডেট নেয়া হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নেয়ার তথ্য রয়েছে। এটা আরও বাড়বে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রশাসনের আলাদা প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সকলকে আনা হয়েছে। দ্বীপের জন্য আলাদাভাবে পাঁচ মেট্টিক চাল ও নগদ এক লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মানুষকে মহেশখালীতে নিয়ে আসা হয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনের ৬৮টি আবাসিক হোটেল মোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।