ছবি: সংগৃহীত
খুলনার দাকোপের কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন নদীতে যেখানে সেখানে বাসছে বড় বড় কুমির। ওই এলাকার খায়রুল ইসলাম মোড়ল নামে এক ব্যক্তি কুমিরের আক্রমণে নিহত হওয়ার পর থেকে আতঙ্কের মাত্রা বেড়েছে। এখন ভয়ে স্থানীয়রা নদীতে নামতে পারছেন না। এ ছাড়া গত বছরেও কয়কজনের গরু, ছাগল খেয়ে ফেলেছে কুমিরে।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে দাকোপ উপজেলার পশুর, চুনকুড়ি, ভদ্রা, ঢাকী, শিবসা, সুতারখালীসহ বিভিন্ন নদীতে মাঝে মধ্যে কুমির ভাসছে। নদীর উপর নির্ভরশীল জেলেরা ভয়ে নদীতেও নামতে পারছেন না। নদী সংলগ্ন বসবাসকারি ও জেলেদের মাঝে কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কালাবগি ফকিরকোনা এলাকার রবিউল ইসলাম মোড়ল প্রথক্ষদর্শী। তিনি জানান, উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের দক্ষিণে শেষ জনপদ কালাবগীর বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ যার নাম ফকিরকোনা। এই এলাকার এক পাশে সুতারখালী নদী, আর এক পাশে শিবসা নদী আর অপর প্রান্তে পশ্চিম সুন্দরবন। এই বনের সবচেয়ে কাছের জনবসতিগুলোর মধ্যে একটি এই ফকিরকোনা। বছর দুই আগে ফকিরকোনা মূল কালাবগী এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ফকিরকোনা দ্বীপে ১০০ পরিবার গাদাগাদি করে টোঙ ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করে। এখানে নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এখনো পর্যন্ত পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। এখানকার সব মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। বনে পাশ পারমিট বন্ধের সময়ে নদীতে মাছ ধরে কোনোমতে সংসার চালান। কিন্তু প্রায়ই সুতারখালী ও শিবসা নদীতে কুমির ভাসছে।
রবিউল ইসলাম আরও বলেন, আমার এক চাচাতো ভাই খায়রুল ইসলাম মোড়ল পার্শ্ববর্তী সুতারখালী নদীতে খেপলা জাল টেনে খাওয়ার মাছ ধরছিলেন। এ সময়ে কুমির এসে খায়রুলের ডান পা ধরে টেনে পানির মধ্যে নিয়ে যায়। দুইদিন পর তার মরদেহ ভেসে ওঠে। তার মরদেহ কবরস্থানে দাফনও করা হয়েছে। বর্তমানে তার ৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী মিনা বেগম অর্ধহারে-অনাহারে দিন খাটাচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে সকলের মাঝে চরমভাবে কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ ভয়ে নদীতে নামতেও পারছেন না। গোসলও করতে পারছেন না। এমনকি শুক্রবার একটি হাঁসের ওপর হামলা করে কুমির। কিন্তু অল্পের জন্য ধরতে পারেনি। এতে হাঁসও ছাড়তে পারছেন না।
ঢাংমারী এলাকার নূরে আলম বলেন, গেল বছর তার একটি গরু নদীর চরে ঘাস খাওয়ার সময়ে কুমিরে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। তা ছাড়া খেজুরিয়া এলাকার একজনের একটি ছাগলও কুমিরে খেয়ে ফেলে।
পূর্ব ঢাংমারী এলাকার রাজিব আহমেদ জানান, তার বাড়ির সুন্দরবন সংলগ্ন ঢাংমারী নদীতে প্রতিদিনের ন্যায় দুপুরে গোসল করতে যায়। এক ডুব দিয়ে মাথায় শ্যাম্পু দেয়ার সময় তার ডান পায়ের উরুতে একটি কুমির কামড় দিয়ে পানির মধ্যে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময়ে সে বুদ্ধি করে কুমিরের চোখে আগুল দিলে তাকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে তার ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে নদীর তীর থেকে তাকে গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। কুমিরটিও তার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ডাঙ্গায় উঠে আসে। পরবর্তীতে রাজু করমজল প্রজনন পর্যটক কেন্দ্রের কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবিরের চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন বলে জানান।
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, তার এলাকায় এখন কুমির আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ নদীতে নামতে পারছেন না।
কালাবগি ফরেষ্ট স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম জানান, এখন চলছে কুমিরের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে সাধারণত কুমির একটু বেপরোয়া থাকে। এ সময়ে যাতে কেউ নদীতে না নামে সে বিষয়ে সকলকে সজাক দৃষ্টি রাখতে হবে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।