ছবি : আপন দেশ
জামালপুরের বকশীগঞ্জের বগারচর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ইউপি সদস্যরা। সোমবার ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদে না থাকার সূযোগে পরিষদের প্রতিটি রুমে তালা লাগিয়ে দেয় সদস্যরা। এতে পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরোধিতার জেরে এই তালাবদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।
পরিষদে তালা লাগিয়ে দেয়ায় মেম্বারদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
জানা যায়, গত কয়েকমাস যাবত বগারচর ইউপির ১১ জন সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থাসহ নানা ভাবে আন্দোলন করে আসছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করেছেন সদস্যরা। এই নিয়ে চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমানিক মাসুম ও ইউপি সদস্যদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আইনগত ভাবে চেয়ারম্যান মেম্বারদের করা মামলা মোকাবেলা করে আসছেন। রোববার পরিষদে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়। ডিলারের মাধ্যমে ৩৭ শ কার্ডধারীর মাঝে এসব পন্য বিতরণ করা হয়৷ ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ডিলারের লোকজন এসব পন্য বিতরণ করেন। কিন্তু টিসিবি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সোমবার পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন সদস্যরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে ইউপি সদস্যরা গ্রাম পুলিশদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমানিক মাসুম। তালাবদ্ধের ফলে
সোমবার থেকে অফিস করতে পারছেন না চেয়ারম্যান। এতে অনেকেই পরিষদে বিভিন্ন কাজে এসে ফেরত যান।
এ ব্যাপারে জন্মনিবন্ধন করতে আসা শেফালী বেগম বলেন, ছেলের জন্মনিবন্ধনের জন্য পরিষদে এসেছেন তিনি। এসে দেখেন পরিষদ তালাবদ্ধ তাই জন্ম নিবন্ধন না নিয়েই ফেরত যাচ্ছেন বাড়িতে।
এ ব্যাপারে টালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব দুদু মিয়া বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্ধের কারণে পরিষদের কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে মামলা পাল্টা মামলা, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারনে সরকারি সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কবে যে চেয়ারম্যান মেম্বারদের দ্বন্ধ শেষ হবে আল্লাহ জানে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান, আফসার আলী, পলাশ ও আবদুল বাসেদ বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। গত রোববার টিসিবি বিতরণে অনিয়ম করেছেন তিনি। অনিয়মের প্রতিবাদে পরিষদে তালা লাগানো হয়েছে। গ্রাম পুলিশদের গালিগালাজ ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।
গ্রাম পুলিশ দিন্নাথ বাবু বলেন, অনেক লোকজন নিয়ে পরিষদে যান মেম্বাররা। গেইট খুলতে দেরি হওয়ায় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমিন বলেন, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে মনোমালিন্য থাকতে পারে। তাই বলে পরিষদে তালা দিতে হবে কেনো। তুচ্ছ কারণে পরিষদে তালা দেয়ার দুঃসাহস পায় কেমনে মেম্বাররা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ব্যাবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন: বকশীগঞ্জ পৌর আ.লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমানিক মাসুম বলেন, একটি কুচক্রী মহলের ইন্দনে মেম্বাররা কোন কারণ ছাড়াই আমার বিরোধিতা করছেন। তারা আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। আমি আইনগতভাবে সেগুলো মোকাবেলা করছি। টিসিবি বিতরণ করেছে ডিলাররা। দুই শতাধিক কার্ডধারী মাল পায়নি। তাদেরকে আগামী বুধবার মাল দেয়ার কথা জানিয়েছেন ডিলাররা। এ ছাড়া সকল কার্ডধারীই পন্য পেয়েছেন। টিসিবি পন্যের সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদের সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সোহেল রানা বলেন, চৌকিদাররা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লুতফুন নাহার মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং ঔ পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কে পরিষদের তালা খুলে দিতে বলা হয়েছে।
আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।