Apan Desh | আপন দেশ

সন্তান হত্যার দায়ে প্রেমিকসহ মায়ের ফাঁসি, দুজনের যাবজ্জীবন

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ২৩ আগস্ট ২০২৩

সন্তান হত্যার দায়ে প্রেমিকসহ মায়ের ফাঁসি, দুজনের যাবজ্জীবন

ছবি : সংগৃহীত

চাঁদপুরের হাইমচরে আপন ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে (২৫) হত্যার দায়ে মা খুকি বেগমসহ (৪৩) দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন।

হত্যার শিকার আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে।

অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জয়নাল গাজী (২৪) পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন-ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (২৬)।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ীর আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন।

আরও পড়ুন: যুবককে হোটেলে নিয়ে যৌন নির্যাতন, আ.লীগ নেতাকে হত্যা

এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোছ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যান।

পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় সরকার পক্ষের আইজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন আদালত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন।

আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সকল আসামির অনুপস্থিতিতে রায় হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়