নাটোরে ছাত্রদলের মাইক্রোবাস থামিয়ে হামলার পর সেটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়
নাটোর: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় নাটোরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়ি থামিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় অন্তত ৩০ নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া টেক্সটাইল মিল, তেবাড়িয়া হাট ও সৈয়দ মোড় এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার সময় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সাতটি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে এসব হামলার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোহেল রানার নেতৃত্বে ১১ জন নেতা-কর্মী সকালে ভাড়া করা একটি মাইক্রোবাসে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়ার খবর পেয়ে তারা দত্তপাড়া হয়ে ভেতরের রাস্তা দিয়ে দিঘাপতিয়ায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে ওঠেন। মাইক্রোবাসটি টেক্সটাইল কারখানার সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের শতাধিক কর্মী-সমর্থক দেশীয় অস্ত্র, রড নিয়ে মাইক্রোবাসটির সামনে দাঁড়ান। তারা প্রথমে মাইক্রোবাসের চালক শাহীন আলীকে এলোপাতাড়ি কোপান ও রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে মাইক্রোবাসের দরজা খুলে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের বেধড়ক পেটান এবং কুপিয়ে আহত করেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা গুরুতর আহতাবস্থায় পাশের একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তারা দেখেন, মাইক্রোবাসে আগুন দেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নাটোর ফায়ার সার্ভিস ও সদর থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাইক্রোবাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
ছাত্রদল নেতা সোহেল রানা বলেন, ‘বাগাতিপাড়া থেকে গাড়ি ছাড়ার পরপরই তারা নাটোরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের বাধার কথা জানতে পারেন। তখন গাড়িচালক ভেতরের রাস্তা দিয়ে নাটোর শহর অতিক্রম করে বগুড়া সড়কে ওঠেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ডাল সড়কের কাছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। হাতে-পায়ে ধরার পরও তারা শোনেননি। সবাইকে কুপিয়েছে ও পিটিয়েছে। তাদের গাড়িচালকের অবস্থা খুবই গুরুতর। আমাকে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন করে বলেছেন, তিনি বাঁচতে নাও পারেন।
এর আগে সকাল ছয়টার দিকে সদর উপজেলার তেবাড়িয়া হাট এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের আরেকটি গাড়িতে হামলা করা হয়। এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানাকে বেধড়ক পেটানো হয়। তাকেও রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদরের সৈয়দ মোড়ের নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে একই সময়ে আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে লালপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম, কাবিল উদ্দিন, যুবদল নেতা মজনু পাটোয়ারী প্রমুখ আহত হন। তাদের মধ্যে কাবিল উদ্দিনকেও রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম (বাচ্চু) বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে রোডমার্চে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে বর্বরতার প্রমাণ দিয়েছে। হামলায় তাদের অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত তিনজনকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে, হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, মাইক্রোবাসে আগুন লাগানোসহ কোনো ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত ছিলেন না। বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদবলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত সব কটি ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় মাইক্রোবাসের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এখন পর্যন্ত কী কারণে এবং কারা, কাদের ওপর হামলা করেছে, পুলিশের জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। পুলিশ তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।