সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা
লালমনিরহাট: ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সেখানে অতিভারী বর্ষণে তিস্তা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়িতে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। ফলে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গেও তিস্তাপাড়ে বড় আকারের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর উজানে (সিকিমে) পানির চাপ বাড়ায় বাংলাদেশের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। প্রবল পানির চাপে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হঠাৎ করেই তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ শুরু করেছে। চরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
জানা গেছে, জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলে এরইমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর ও রাস্তা ঘাট।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর ও গোকুণ্ডা এলাকার মানুষজন আতঙ্কে রয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, তিস্তা পাড়ে রেড এলার্ট শুনে চরাঞ্চলের লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন স্কুল ও উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হোসেন তিস্তা ব্যারাজ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করতে বলেছি। সার্বিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। আমরা সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী শনিবার (৭ অক্টোবর) নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, পুনর্ভবা, কুলিখ টাঙ্গন, ইছামতি, যমুনা ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
এই সময়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মহানন্দা, ছোট যমুনা, করতোয়া, আত্রাই ও গুর নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, কালিম্পংয়ে ১০ নম্বরের জাতীয় সড়ক ভেসে গেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ধসের কারণ বাংলা-সিকিমের যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। ড্যাম ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার পানিতে সিকিমে বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। আর দেশটির সিএনবিসি টিভির খবরে বলা হয়েছে এরই মধ্যে বন্যায় কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ভেসে গেছে ভারতীয় ২৩ সেনা।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।