বাগেরহাট শহরে চলাচলের অনুপযুক্ত একটি সড়ক
বাগেরহাট: সারাদেশের সব রাস্তা-ঘাটের যেখানে উন্নতি হচ্ছে সেখানে ১৫.৮৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাগেরহাট পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে। এতদিন কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চললেও চলতি বর্ষায় অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে অনেক সড়কে রিকশা চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর একটু বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে পানি জমে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সরেজমিনে শহরের দশানী, নূর মসজিদ মোড়, পুরতন বাজার, মুনিগঞ্জ, মালোপাড়া, সাধনার মোড়, খারদ্বার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত, তাতে জমে আছে পানি। কোথাও প্যাচপ্যাচে কাদা। আবার কোথাও পিচের রাস্তার ওপর দেয়া হয়েছে ইটের সোলিং। সেখানে হেলেদুলে চলে ইজিবাইক, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। কাদা পানিতে অনেক রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর। আবার অনেক রাস্তায় পানিতে না ভিজে যাবারই সুযোগ নেই।
আবার সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় শহরের রাহাতের মোড়, মেইনরোড, ডাকবাংলা রোড, সাধনার মোড়, নাগেরবাজার লেক রোড, হাড়িখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগের বাজার মন্দির রোড, খারদার, শালতলা-প্রেসক্লাব রোড, বাগেরহাট সদর থানার সামনে, টোলপ্লাজা থেকে বাসাবাটি সড়কসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা। অনেক এলাকায় পানি জমে থাকে দিনের পর দিন।
একাধিক বাসিন্দা জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেন নির্মাণ করলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। অল্প বৃষ্টিতেই বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি হলে পানি সড়কের পাশের বাড়িগুলোতে ঢুকে পড়ে। তখন দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
শহরের খারদ্বার এলাকার ফারজানা রিমি বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। কয়েকদিন বৃষ্টি হলে তো হাঁটু পানি জমে রাস্তায়। পানি জমে থাকায় এখন রাস্তার পিচ-খোয়াও উঠে যাচ্ছে। এই দুর্ভোগ বলে বোঝানো যাবে না।
পৌরসভার পার্শ্ববর্তী কাড়াপাড়ার বাসিন্দা রিকশা চালক মো. রফিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার মতো গরিবের মরণ সব জায়গায়, দেশের সব জায়গায় রাস্তাঘাটের উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু বাগেরহাট শহরের রাস্তা-ঘাট কই? রিকশার চাকা ঘুরলে পেটে ভাত জোটে, না হলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। এই শহরের বেশিরভাগ রাস্তা এত খারাপ যে ঠিকমত রিকশাও চালানো যায় না। রাস্তার কারণে এই মাসে তিনবার টায়ার-টিউব বদলাতে হয়েছে। ৮০০- ১০০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট কবে ভালো হবে আল্লাহ জানে। আমাগো ব্যাটারির রিকশা, পানিতে গাড়ির ক্ষতি। কিন্তু সব রাস্তায়ই কাদা পানি। এত খারাপ রাস্তা কি আর কোনো শহরে আছে?
রামপাল থেকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শরিফ নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, অসুস্থ রোগী নিয়ে অটোতে করে এসেছি। বড় রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু শহরের মধ্যে প্রবেশের পরে রোগী তো যেমন-তেমন সঙ্গের সুস্থ মানুষও ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
শহরের পুরাতন বাজার এলাকার রুহুল শেখ বলেন, নদীতে জোয়ার হলেই রাস্তা ডুবে, বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে কাদামাটিতে একাকার অবস্থা।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা বলেন, রাস্তাঘাটের যে অবস্থা সুস্থ মত কলেজে পৌঁছানোও বড় চ্যালেঞ্জ। একটু বৃষ্টি হলেই কলেজে যেতে পারি না, ইউনিফর্ম ময়লা হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট পৌরসভা ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়। ১৫.৮৮৮ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৭টি মহল্লায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। পৌর এলাকায় সড়ক আছে ৭৮.৩০ কিলোমিটার। আর পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে ৫৫ কিলোমিটার। মোট সড়কের প্রায় ৭০ ভাগই বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ।
পৌরসভার হিসাব ও প্রকৌশলী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সড়কসহ পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যে কোস্টাল টাউন্স ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স প্রজেক্টে (সিটিসিআরপি) ১২৪ কেটি টাকা, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (আইইউআইডিপি) ২০ কোটি এবং কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় ৫.৫ কেটি টাকা ব্যায়ে সড়কসহ পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে।
বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) রেজাউল হক রিজভী বলেন, বর্তমানে ৭০ ভাগ রাস্তারই সংস্কার প্রয়োজন। তিনটি প্রকল্পের আওতায় ১৫৩.৫ কোটি টাকা ব্যায়ে পৌরসভার সড়কসহ উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।