ছবি: আপন দেশ
মুঘল সুবেদার শাহ সুজার আমলে নির্মিত মল্লিকপুর জামে মসজিদ। সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা। ঐতিহাসিক এই পুরাকীর্তি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। মসজিদটি ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মল্লিকপুর এলাকায় অবস্থিত। এক মিনারবিশিষ্ট মসজিদটি সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি বলে ধারণা অনেকের।
তবে এর নির্মাতা কে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। জনশ্রুতি রয়েছে, শাহ সুজা এর প্রতিষ্ঠাতা। তার সময় এ অঞ্চলে সুজাবাদ নামে একটি গ্রামের পত্তন করা হয়। সেখানে দুটি কেল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, জলদস্যুদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে শাহ সুজাই দুর্গগুলো নির্মাণ করেন।
৩০ ফুট লম্বা ও ১৭ ফুট চওড়া প্রাচীন এই মসজিদ দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন। তবে সঠিক নজরদারি ও সংস্কারের অভাবে এর সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার পথে। তাই তীব্র আহগ্র নিয়ে আসা পর্যটকরা অনেকটা মলিন মুখেই ফিরে যান, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
মসজিদটি দেখতে আসা বরিশালের বাসিন্দা মঈনুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘মসজিদটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি অনন্য এর নির্মাণশৈলী। ঐতিহাসিক এই নিদর্শনগুলো সরকারের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘শাহ সুজার আমলে নির্মিত এই মসজিদটি উপজেলার অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই মসজিদটিকে প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।’
নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, ‘আমাদের মুরব্বিরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন। তখন শহরে তেমন কোনো মসজিদ ছিল না। সংরক্ষণের অভাবে মসজিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মসজিদটি রক্ষা করা প্রয়োজন।’
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাচীন নিদর্শনগুলো বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করা হলে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করব।’
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
উল্লেখ্য, মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মমতাজের দ্বিতীয় ছেলে শাহ সুজা। ২৩ জুন ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দ জন্ম। সম্রাট শাহজাহান ছেলে সুজাকে ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশা প্রদেশের দায়িত্বও অর্পণ করেন। ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি প্রদেশ দুটি শাসন করেন।
শাহ সুজার আমলে ঢাকার প্রাচীন মুঘল দালানগুলো নির্মিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম- বড় কাটরা, ঈদগাহ, হোসেনি দালান এবং চুড়িহাট্টা মসজিদ। চকবাজারের একটু দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার তীরে বড় কাটরা তৈরি করা হয়। মনোমুগ্ধকর স্থাপনাটি মূলত মুঘল যুবরাজ শাহ সুজার বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়।
আপন দেশ/এ্আই/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।