ছবি: আপন দেশ
‘যে জার গো বাবা ভূঁইত পা দেয়া যাইতেছে না। হাত-পা গুনা কাইপতাছে। ক্ষেত তো গারছি, কী আর করুম। জারত কাম না করিলে ক্ষেত নষ্ট হইব, তা ছাড়া উপয় তো নাই গো বাপু। যে জার আইছে সারার নাম নাই।’ তীব্র শৈত্যপ্রবাহে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় কাজে নেমেছেন বৃদ্ধা ছরুতন বেগম। নীলফামারীর তিস্তা চরের টাপুর চর এলাকার বাসিন্দা তিনি।
ছরুতন জানান, ‘আইজ পাঁচ দিন ধইরা হাড় কাপানো ঠাণ্ডা শুরু হইছে। কবে সারবো আল্লাহ ভালো জানে। পতিদিনে (প্রত্যেকদিন) আলু ক্ষেতে ওষুধ দেওয়া নাগে। পেঁয়াজ ক্ষেতে ছাতা (ছত্রাক) ধরছে পরিস্কার করা নাগে। তোমার চাচা বেডা আইছে ওষুধ দিতাছে, আমি পানি নিয়া দিতাছি।
পাশের ক্ষেতে কাজ করা নুরু মিয়া নামের আরেকজন জানান, ঠাণ্ডা যেভাবে জেঁকে বসেছে তাতে মনে হয় আর বাঁচা যায় না। সাধারণ মানুষ কর্ম বেকার হয়ে পড়ছে। আগে মানুষ দিয়ে চাষা বাদ করতাম। কিন্তু ঠাণ্ডার কারণে লেবার আসতে চায় না। তাই নিজেবিষ (কীটনাশক) ছিচাচ্ছি।
বেলা তখন সাড়ে ১১টা। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামের নদীর তীর গাছের পাতা ও খড়-খুটায় আগুণ লাগিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকেই।
জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী, ছোটখাতা, পূর্ব ছাতনাই, কিছামতসহ আশাশ এলাকা নদী বেষ্টিত হওয়ায় শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতে বিপাকে পড়েছে নদী ও চর কেন্দ্রীক খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। নদী তীরে জেলে, নদীতে পাথর তোলা শ্রমিকের নৌকা সারি-সারি বাঁধা রয়েছে। নদীর চরে কৃষি ক্ষেতে কর্মজীবি শ্রমিকসহ প্রায় ৬ হাজার বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তারা চিকিৎসাসহ অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান আপন দেশকে বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলার জন্য ৫ হাজার ৮শ কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ১শ’ বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কম্বল বিতরণের কার্যক্রম চলছে।
ডিমলা উপজেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় সকালের দিকে গাড়ি লাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। নদী বেষ্টিত এলাকা ঠাণ্ডার মাত্রা অনেকটা বেশি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।