ছবি: সংগৃহীত
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি প্রিন্টার নষ্ট থাকায় এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি সমস্যায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও বন্ধ দীর্ঘদিন। জরুরি এ সেবাগুলো বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধ সংকটও। যেখানে হাসপাতালের চিকিৎসা দেয়ার কথা, সেখানে হাসপাতালই নানা সংকটে জর্জরিত। হাসপাতাল যেন নিজেই অসুস্থ।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। আছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে অন্য হাসপাতালের পাঁচজন চিকিৎসক এখানে সংযুক্ত হয়ে কাজ করছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় পুরুষ নার্স কম থাকায় জরুরি সেবায় বিঘ্ন ঘটে। রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট।
১০০ শয্যার ঝালকাঠির সদর হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার সেবা প্রার্থী আসেন। এরমধ্যে দৈনিক গড়ে ২০-২৫ জন রোগী ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ মানষ। হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে অহরহ রোগী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া চক্ষু বিশেষজ্ঞের পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যান। এসব রোগীদের বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধ সংকটও। সব ধরণের ওষুধ নেই দীর্ঘদিন ধরে। জেলা সদরের এ হাসপাতালের প্যাথলজিতে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ফলে এখানে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয় রোগীদের। এতে করে সরকারি ধার্যকৃত টাকার চেয়ে কয়েকগুন বেশি অর্থ গুনতে হয় তাদের।
গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালটির এক্স-রে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সেটিকে সচল করার কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। ঝালকাঠি সদর হাসপালে কেএমসি কর্নার নেই। এনআইসিউ না থাকায় নবজাতক শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন স্বজনরা। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়কের চাপিয়ে দেয়া নিয়মের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি কেনা বন্ধ রয়েছে। ফলে গত ছয় মাস ধরে রোগীরা নিজ ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের খরচ বহন করছেন।
এদিকে ২৫০ শয্যার জন্য ৯তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হয়েছে। তবে জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় এখনি চালু হচ্ছে না এর কার্যক্রম। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে রোগীদের এক্স-রেসহ সকল সেবা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
আরও পড়ুন>> ঘুষ দিলেই চাটমোহরের খাস জমি হয় ব্যক্তির
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদকাঠি এলাকার শিউলী আক্তার বলেন, আমার ছেলের ঘাড়ে সমস্যা। এখানে এসেছিলাম চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক পেলাম না। এখানের চিকিৎসকরা বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বলেছেন।
নলছিটি উপজেলার মগড় গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ছেলের হাঁটুতে ব্যথা। চিকিৎসক এক্স-রে করতে বলেছেন। হাসপাতালের এক্সে-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। তাই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেশি টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে। এ হাসপাতালে সব ধরণের প্যাথলজিও নেই। শুধু ডা. আবুয়াল হাসান ও ডা. ইমাম হোসেন জুয়েল ছাড়া ভালো কোনো চিকিসক নেই। এই দু’জনের কক্ষে ভিড় লেগে আছে। যত রোগী, তারাই সামলাচ্ছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, চিকিসক ও নার্স সংকট অনেক আগে থেকেই। ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি উদ্বোধন হওয়াতে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু নতুন হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আমরা এক্স-রে মেশিনের প্রিন্টার সারানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শীঘ্রই এসব সমস্যা সামাধান হবে।
আপন দেশ/এআই/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।