ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরের নগরকান্দার আলোচিত আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর (১৪) হত্যায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেযা হয়েছে আরও তিনজনকে। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মাহাবুব আলম, কামাল মাতুব্বর ও খোকন মাতুব্বর। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- আশরাফ শেখ, আজিজুল শেখ ও সুজন মাতুব্বর।
বুধবার (২৭ মার্চ) ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ জুন তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় অন্তর। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরদিন নগরকান্দা থানায় জিডি করেন তার মা জান্নাতি বেগম। ওই দিন রাতে অন্তরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি অন্তরের ব্যবহৃত নম্বর থেকে তার মাকে জানান। মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরে ১৪ জুন মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভাঙ্গার একটি প্রাইমারি স্কুলের ঠিকানায় যেতে বলে। কিছুক্ষণ পর তাদের ভাঙ্গার বদলে তালমা জাইল্যা ব্রিজের কাছে এবং তারপর কোনাগাঁও চকের একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে টাকা রেখে আসতে বলে।
তাদের কথা অনুযায়ী, নগরকান্দা থানা-পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তিপণের এক লাখ ৪০ হাজার টাকা সেখানে রেখে আসা হয়। চক্রটি টাকা নেয়ার সময় পুলিশ দূর থেকে দেখেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জান্নাতি বেগম সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে, মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পরও অন্তরকে মুক্তি দেয়নি চক্রটি।
এরপর ১৫ জুন নগরকান্দা থানায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৪ জুন ওই মামলার আসামি মাহাবুব আলম ও তার ভাই জুবায়ের আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে নিখোঁজের ১৯ দিন পর মাটির নিচে পুঁতে রাখা অন্তরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই বছরের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় গ্রেফতার অপর আসামি জুবায়েরকে দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলার ছয়জন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায়ে নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন পর রায় হয়েছে, এ রায়ে আমি খুশি। আমি দ্রুত এ রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যেন আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল জানান, বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছে। এ রায়ের ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। দেশে আইনের শাসনের পথ সুগম হবে।
মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও বিমল তুলশিয়ান জানান, এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।