Apan Desh | আপন দেশ

বান্দরবানে তাণ্ডব

সাত মামলায় নাম নেই কোনো কেএনএফ সদস্যের

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:০০, ৭ এপ্রিল ২০২৪

সাত মামলায় নাম নেই কোনো কেএনএফ সদস্যের

ছবি : সংগৃহীত

বান্দরবানের থানচি ও রুমায় দফায় দফায় ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। কিন্তু এ মামলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কোনো নেতা ও সশস্ত্র সদস্যের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র‌্যাব সংশ্লিষ্টরা ওই ঘটনায় কেএনএফের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা বলেন। এ ঘটনায় রুমায় চারটি ও থানচিতে তিনটি মোট সাতটি মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। 

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া মামলা সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কুকি-চিন সদস্যের নাম না থাকার তথ্যটি জানা যায়।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় কুকি চিন নামে একটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হামলা, ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় গত ৫ এপ্রিল পুলিশ, আনসার, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের ১৩০-১৫০ জনকে আসামিকে করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় চারটি মামলা দায়ের করেন। সেই সঙ্গে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের ২৫-৩০ জনকে আসামি করে সোনালী, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা ও পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন ধারায় তিনটিসহ মোট সাতটি মামলা দায়ের করে এবং আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

থানচি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অজ্ঞাতদের আসামি করে থানচি থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে, আসামি ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলায় বলা হয়, গত ২ এপ্রিল ৮ টা ১৫ মিনিটে রুমা থানার রুমা বাজারস্থ সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০-১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সোনালী ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) হতে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণকালে সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুইটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারী দলের সদস্যরা ওই রাত ৯টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলি ও ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেল পাড়ার দিকে চলে যায়।

বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলায় আরও বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল আনুমানিক ১২টা ৪০ মিনিটে ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এসময় ১৫ হতে ২০ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক তিন লাখ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনদের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফায়ার করে ত্রাস সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহান পাড়ার পাহাড়ী এলাকার দিয়ে চলে যায়।

আরও পড়ুন <> শবে কদরে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা

এদিকে শনিবার (৬ এপ্রিল) জেলার রুমার সোনালী ব্যাংক পরিদর্শন কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্রলুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া এ ঘটনা ঘটার আগাম তথ্য দেয়ার বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যার্থতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এদিকে কেএনএফের সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্য শৈ হ্লা বলেন, কেএনএফ শান্তি আলোচনার চুক্তি ভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে। তারা ব্যাংকে হামলা চালিয়ে ম্যানেজারকে অপহরণ করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাই এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আর কোনো শান্তি আলোচনা হতে পারে না। এসব ঘটনার পর হামলাকারী কারা এবং কারা হামলার সঙ্গে জড়িত সেটি জানার পরও অজ্ঞাত আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কেন না কেএনএফ হামলা চালিয়েছে। এটি স্পষ্ট তারপর তাদের কারো নাম না দেয়া মানে এতে অনেক সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হবে। আসল আসামিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। আর কেএনএফ কারা তাদের পরিচয় সবাই জানে, তাদের সঙ্গে টেবিল-টক হচ্ছে। তাহলে তাদের নাম বা পরিচয় না জানারও কোনো কারণ নেই। এটি অনভিপ্রেত ও রহস্যজনক।

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, মামলায় দেড় শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমরা নিশ্চিত নই। তাই সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্ত করে আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে কোনো আসামি পার না পায়।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়