ফাইল ছবি
জাতীয় নির্বাচনে নৌকা-ঈগল লড়াইয়ের জের বইছে ফরিদপুর সদরে। প্রশাসন গুরুত্ব দিলেও দলীয় নেতাদের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না সংসদ সদস্য একে আজাদ।জেলায় বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানের আয়োজক ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা।
আগামীকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় স্থানীয় স্বাধীনতা চত্ত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চৌধুরী কুশল স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাতে প্রধান অতিথি করা হয়েছে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ঝর্না হাসানকে। উদ্বোধক করা হয়েছে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারকে।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি করা হয়েছে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক (নৌকার প্রার্থী), জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুর পৌর সভার মেয়র অমিতাভ বোস ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মোল্লাকে।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ.কে. আজাদ গত ১০ এপ্রিল থেকে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। রোববার সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যে মঙ্গলশোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সে অনুষ্ঠানে তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমানের। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ফরিদপুরের অন্য সব সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এইচ এম এরশাদের সময়কালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফরিদপুরের স্বাধীনতা চত্ত্বর এলাকায় (কোর্টপাড়) প্রথম বর্ষবরণসহ বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়। ১৯৮৪ সালে সেটি হয়েছিল ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে। স্বৈরাচার পতনের পর থেকে আয়োজনটি উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তবে করোনা মহামারি ও পবিত্র রমজান মাসের কারণে চারবছর এ মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর এবারই প্রথম বর্ষবরণসহ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
এ অনুষ্ঠানে ফরিদপুর সদরের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ. কে. আজাদকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে নৌকা-ঈগল লড়াইয়ের জের বইছে ফরিদপুর সদরে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ বলেন, এ সংগঠনের উদ্যোগে বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কীভাবে হবে তা লিখিত আকারে রেজুলেশন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাতে সদর আসনের সংসদ সদস্য এ. কে. আজাদকে প্রধান অতিথি, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ঝর্না হাসানকে বিশেষ অতিথি এবং জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারকে উদ্বোধক করা হয়। পরবর্তিতে কীভাবে সব পাল্টে গেল তা বোধগম্য নয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, এ. কে. আজাদকে আমন্ত্রণ না জানানো হীনমন্যতার পরিচয়। নির্বাচিত ও মনোনীত দুজন সংসদ সদস্য হলেও নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এ ব্যাপারে সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আবুল ফয়েজ জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কুশল চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেই গালি সহ্য করতে না পেরে কুশল চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চৌধুরী কুশল বলেন, এক বুক কষ্ট নিয়ে এ অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে। আপাতত এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।
উল্লেখ্য, এ আসনে সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তিনি আইনি বিধিবিধানে পড়েন। অবশেষে প্রার্থিতা টেকে। তার সঙ্গে তুমুল লড়াই হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হা-মীম গ্রুপের এ কে আজাদের।
নির্বাচনে এ কে আজাদ পেয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হক পায় ৭৫ হাজার ৮৯ ভোট। দুই প্রার্থী মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৫৯ হাজার নয়টি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।