ছবি: সংগৃহীত
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে নারী অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এতে একটি মামলাও হয়েছে। আসামির নাম আতিকুল হাসান বিপ্লব। অপহৃত নারী বিবাহিত বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ঢাকা থেকে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে। তবে এখনো অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। ফৌজদারি অভিযোগ ওঠার পরও সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ দলীয় নেতাকর্মীরা।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) উদ্ধার হওয়া নারীকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বিপ্লব রাঙালিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করতেন। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে দীর্ঘদিন ধরে আতিকুল হাসান বিপ্লব কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। ভুক্তভোগী বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানালে উত্ত্যক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দেন বিপ্লব। এক পর্যায়ে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেন বাবা-মা।
বিয়ের পরে গত ৩১ মার্চ বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসলে বিপ্লব একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে তার পরিবার। কিন্তু প্রতিকার না পেয়ে গত ৮ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা রেখা পারভিন। মঙ্গলবার রাতে ওই নারীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জুলেখা পারভিন অন্তরা বলেন, পুলিশ প্রথম থেকেই অপহরণের ঘটনায় পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিপ্লব ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। পরে আমরা আদালতে গিয়েছি। আদালতের কপি থানায় দিলেও পুলিশ গাফিলতি করেছে। উদ্ধারের পর বোনের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। ১৭ দিন ধরে আমার বোন কোথায় ছিল? তাকে ভয় দেখিয়ে স্বীকোরোক্তি নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে নববধু অপহরণের অভিযোগ
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, পুলিশের এ ঘটনায় কোনই গাফিলতি নেই। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের পর, তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে আদালতে তিনি যে জবানবন্দি দেবেন তার ভিত্তিতেই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। অভিযুক্ত বিপ্লবকে আটকেও অভিযান চলছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বিপ্লবের মোবাইল ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মামলা দায়েরের পর জেলা ছাত্রলীগ বিপ্লবকে কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া তেমন কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। এতে পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রনেতা জানান, এ নারীর সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে বিপ্লব প্রকাশ্যে নানা বিতর্কিত কাজে জড়িয়েছে। পরিবার থেকে বিয়ে দিতে চাইলে সে রাজি হয়নি। পরে, অন্যত্র বিয়ে হওয়ার পরেও মেয়েটিকে নানাভাবে উত্যক্ত করেছে। গত ৩১ মার্চ থেকে মেয়েটি অপহরণের ঘটনায় বিপ্লবের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতবড় ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলেও জেলা ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করেনি। ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ায় পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। বিপ্লবের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই গত ১২ এপ্রিল বিপ্লবকে শোকজ করা হয়েছে। তাকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও এখনো জবাব পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় সংসদকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
আপন দেশ/এনআর/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।