আপন দেশ। ফাইল ছবি
তৃতীয় ধাপে হবে বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। মাঠে সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জনসংযোগে শামিল করছেন নিজেদের। তবে এবার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে না। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি, এমন ধারণা সাধারণ ভোটারের। চেয়ারম্যান পদের জন্য লড়বেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতা ও এর সহযোগী সংগঠনের এক নেতা। তবে গুরুর চেয়ারে বসতে ‘ত্রিমুখী’ এ লড়াইয়ে শীষ্যরা ইতোমধ্যে মরিয়া হয়ে উঠছেন। এ তথ্য জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।
এ উপজেলায় একটি পৌরসভা, ১১ ইউনিয়নে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩৪ হাজার ২২৯ জন। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবু সুফিয়ান সফিক। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন।
তথ্যমতে, রনি ও লিটনের ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি হয় আবু সুফিয়ান সফিকের হাত ধরে।
ঘনিয়ে আসছে উপজেলা নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণা, উঠান বৈঠক, জনসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। সমর্থকরাও বেশ উৎসাহ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তবে আগামী ১৩ মে থেকে আনুষ্ঠানিক এ প্রচারণা আরও বৃদ্ধি পাবে।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সুফিয়ান সফিক বলেন, এবারও আমি চেয়ারম্যান পদের একজন প্রার্থী। প্রতীক হিসেবে ঘোড়া চেয়েছি। আগামী ১৩ মে থেকে এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। ইতোমধ্যে সব প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
গত ৯ মে সরেজমিনে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, যিনি সৎ, দক্ষ, উপজেলায় টেকসই উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি পরিবর্তন আনতে পারবেন- এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে চান। এবার ভোটদানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করবেন ভোটাররা। প্রার্থী মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, আদতে উপজেলার রাস্তা-কালভার্ট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে পারবেন কিনা, এমনকি রাজনৈতিক দক্ষতা। এছাড়াও উপজেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নের মানসিকতাও বিবেচ্য হবে বলে জানান তারা। প্রার্থীর অপরাধ সংশ্লিষ্টতাকেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা এখনও শুরু হয়নি। এরমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এবং মাঠ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলাসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদগারে মেতেছেন।
দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে কথা হলে দ্বন্দ্ব ও বিষোদগার নিয়ে মুখ খুলেন তারা। দোষ চাপান একে অন্যের ওপর। বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেরি। এখনই প্রার্থী ও সমর্থকেরা সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে হানাহানি, দ্বন্দ্ব ও বিষোদগার মেতে উঠেছেন। তবে, শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের সহিংসতায় জড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা তাদের।
সফিক বলেন, টানা ১৫ বছর জনপ্রতিনিধিত্ব করছি। সবার সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে অনেকে নির্বাচিত। তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো। সেই কারণে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। এখানে আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে আছে, নিরপেক্ষ মানুষ আছে।
শাখারিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আবু সুফিয়ান সফিকে যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে। এক সময় তুখোর ছাত্রনেতা ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি খুবই চৌকশ। নির্বাচনী মাঠেও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শফিক বলেন, উপজেলায় আরও দুজন প্রার্থী হচ্ছেন। তারা আমার হাতেই ছাত্রনেতা তৈরি হয়েছিল। এটা সবচেয়ে বড় সফলতা, এজন্য আমি গর্বিত। আমার কর্মীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
মনোনয়নপত্র দাখিল
তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। হলফনামা সূত্রে জানা যায়, বাকি দুই প্রার্থীর চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক যুবলীগ নেতা শুভাশীষ পোদ্দার লিটন ও তার স্ত্রী সঞ্চিতা রানী পোদ্দার।
হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ১৬ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ২ লাখ টাকা এবং শেয়ার সঞ্চয়পত্র থেকে ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৫০ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রী পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সেখান থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৭ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া ৬০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে আয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৪৭৯ টাকা এবং চাকরি থেকে আয় ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১০৮ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ বিবরণীতে লিটন নিজের কাছে নগদ ৩ লাখ টাকা, জীবন বীমায় জমা ১০ লাখ ২১ হাজার ৩০৬ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকার, মানবতা হাউজিংয়ে বিনিয়োগ এক কোটি টাকা, ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ৭০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া তার স্ত্রীর কাছে নগদ ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩২ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৩৭ লাখ টাকার, বন্ড কেনা ৬৯ হাজার ৩৬৮ টাকার, ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।
অন্যদিকে নানা অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে লিটনের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাস্তানি, জবরদখল, ভূমি দখলের অভিযোগে বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে শিরোনামও হয়েছে তিনি।
এদিকে হলফনামায় সুলতান মাহমুদ খাঁন রনি ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ বিবরণীতে রনি ব্যবসার পুঁজি হিসেবে নগদ ২৮ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ টাকা, ব্যাংকে জমা ১ লাখ টাকা, ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি মাইক্রোবাস, নিজের নামে ৫০ হাজার টাকার ও স্ত্রীর নামে ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার এবং ১ লাখ টাকার ইলক্ট্রেনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।
হলফনামায় আবু সুফিয়ান সফিক বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এরমধ্যে ব্যবসা থেকে আয় করেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পরিষদের ভাতা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ বিবরণীতে তিনি নগদ ৩১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৫ হাজার টাকা, ২০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার এবং ৮০ হাজার টাকার ইলক্ট্রনিক ও আসবাবপত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি স্থাবর সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সেমিপাকা টিনশেড বাড়ি ও স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন ৪তলা ভবন।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।