ছবি : সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রাম। এ গ্রামেরই বাসিন্দা নুরুন্নাহার বেগম। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য। এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
মজার বিষয় শুধু নুরুন্নাহার নন, তার মেয়ে নাসরিন আক্তারও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। মা-মেয়ে একসঙ্গেই পাস করেছেন। ফলাফলে মেয়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মা।
রোববার (১২ মে) প্রকাশিত ফলাফলে মেয়ে নাসরিন চাতলপাড় ওয়াজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-দুই দশমিক ৬৭ পেয়েছে। নুরুন্নাহার একই বিদ্যালয়ের কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখা থেকে জিপিএ-চার দশমিক ৫৪ পেয়েছেন।
নুরুন্নাহার (৪৪) চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের দুবারের নির্বাচিত সদস্য। তিনি কাঁঠালকান্দি গ্রামের মো. ফরিদ মিয়ার মেয়ে। তার স্বামী মো. দুলাল মিয়া ইটভাটার ব্যবসা করেন। এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় সন্তান আরিফুল ইসলাম (২২) ঢাকার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
প্রায় ২৩ বছর আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন নুরুন্নাহার বেগমের বিয়ে হয়। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুই ছেলে-মেয়ে আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন রক্ষণশীল হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি। তবে মনের ভেতর থেকে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা বাদ দিতে পারিনি। এসএসসি পরীক্ষা না দিতে পেরে মনের ভেতর জেদ ছিল— যেদিন সুযোগ পাব, তখনই এসএসসি পরীক্ষা দিব।
আরও পড়ুন <> ভারতে ৪র্থ দফার ভোটগ্রহণ চলছে
দ্বিতীয়বার ইউপি সদস্য হওয়ার পর পড়াশোনা করার পরিকল্পনা শুরু করেন নুরুন্নাহার। ভাই স্বপন মিয়া ও স্বামী-সন্তানের অনুপ্রেরণায় চাতলপাড় ওয়াজউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখায় নবম শ্রেনিতে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্য হওয়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারতাম না। সপ্তাহে এক দিন বা ১৫ দিনে দুই দিন যেতাম। যখন সময় পেতাম, তখন পড়তাম। বিশেষ করে বিকালবেলায় পড়তাম। প্রথম দিকে গ্রামের লোকজন টিপ্পনী দিত। বলত, এই বয়সে পড়াশোনা করে কী করবেন! কী দরকার আছে পড়াশোনার! কিন্তু আমি দমে যাইনি।’
এসএসসি পরীক্ষার সময় মেয়ে নাসরিন আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে ফল বেশি ভালো হয়নি। মায়ের ফলে সে ভীষণ খুশি বলে জানান নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, পড়াশোনার কোনো বয়স লাগে না। যেকোনো সময়ে পড়াশোনা করা যায়। নারীদের এগিয়ে যাওয়া দরকার। নানা কারণে তারা এগিয়ে যেতে পারে না। পরিবার থেকে যদি অল্প বয়সে বিয়ের চাপ দেয়া হয়, তাহলে প্রতিবাদ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিক মিয়া বলেন, ‘একজন ইউপি সদস্য হয়েও নুরুন্নাহার মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন। বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি একজন আদর্শ হয়ে থাকবেন। কারণ, অনেকেই এ কাজ করতে পারবেন না।’
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।