ছবি: সংগৃহীত
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) কর্মরত ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে বদলি চেয়ে আবেদন করেছেন। কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের জেরে দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। প্রতিকার চেয়ে অফিস ফাঁকা রেখেই নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৯ কর্মকর্তা দু’দিন ধরে অবস্থান করছেন ঢাকায়। নজিরবিহীন এ ঘটনায় কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও পরস্পরকে দোষারোপ করে চিঠি দিয়েছেন।
জানা গেছে, বেড়া পাউবোর পওর বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা কর্মরত থাকাকালীন নামে বেনামে ঠিকাদারি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট শুরু করেন। নিয়মিত বদলির চাকরি হলেও এসব কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে অবস্থান করছেন। প্রকাশ্যে অনিয়মও করে আসছিলেন।
অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বেড়া পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমদাদ আহমেদ, এমরান হোসেন, গাড়ি চালক আব্দুর রহমান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জেলহক আলমকে কর্মস্থল থেকে বদলির লিখিত সুপারিশ করেন।
সুপারিশপত্রে শামসুল হক টুকু জানান, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল, সালেহ আহমেদ, শহিদ ব্রাদার্স, ওমর এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে উন্নয়ন কাজের প্যাকেজে যোগসাজশ করে ব্যবসা করেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে জনগণকে পাউবোর জমি লিজ বরাদ্দ দেয়ার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি ড্রাইভার আব্দুর রহমান ব্যক্তিগত প্রিমিও গাড়ি ব্যবহার করেন। স্থানীয়দের সিন্ডিকেটমুক্ত করতে তিনি অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলির দাবি জানান।
সুপারিশ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সত্যতা পেয়ে, ফেব্রুয়ারি মাসেই কয়েক দফায় সিন্ডিকেটের কমকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন জেলায় বদলি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর কর্মকর্তাদের মধ্যে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বদলি হওয়া, কর্মকর্তারা নতুন পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের কাছে তাদের অসমাপ্ত কাজ ও বিলের হিসাব বুঝিয়ে দেয়া নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। কয়েক দফায় চিঠি দেয়ার পরেও তারা এসব হিসাব বুঝিয়ে না দেয়ায় দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে।
একই সঙ্গে বর্তমান কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ সম্বলিত গোপন নথি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দফতরে যেতে থাকে। এসব ঘটনায় বর্তমান কর্মকর্তারা বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের সন্দেহ করেন। একপর্যায়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ৯ মে স্বেচ্ছায় বদলি চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন ৩৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
আরও পড়ুন>> টাকাসহ পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালাল ঠিকাদার
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিব্রত, হয়রানি, মানসিক, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে নামে বেনামে মিথ্যা, হয়রানি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পত্র প্রেরণ করছেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের বিব্রতকর জবাবদিহি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’ এমন পরিস্থিতিতে কাজের পরিবেশ নেই দাবি করে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেন তারা।
বুধবার (১৫ মে) সকালে বেড়া পাউবোর পওর বিভাগে সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ। তবে তিনজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী আনিছুর রহমান, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান অফিস করছেন। বেশিরভাগ কর্মচারীও অফিসে নেই।
এ ব্যাপারে তারা বলেন, ‘স্যারদের অফিসিয়াল কাজ থাকায় তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।’
পাউবোর (পওর বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন>> প্রকৌশলীদের হত্যার হুমকি, দুই ঠিকাদার গ্রেফতার
পাউবো পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৗশলী আমাকে জানিয়েছেন ঢাকায় একটি মিটিংয়ে যাবার কথা। কিন্তু ৯ জন একসঙ্গে ঢাকা যাবার বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আর একযোগে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি চাওয়ার আবেদন ডিজি মহোদয় বরাবর দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু অফিসিয়িালি কোনো ডকুমেন্ট এখনও পাইনি। তাই সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
আপন দেশ/আরএন/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।