ছবি: সংগৃহীত
গত ৮ মে পাবনার সুজানগর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে জয় পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব। পরাজয় হয় সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন। নির্বাচনের পর একের পর সহিংসতার ঘটনা ঘটছে উপজেলায়। পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, মারপিটে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যেই এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (১৭ মে) রাতে উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি। ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, পরাজিত প্রার্থী শাহিনুজ্জামানকে ভোট দেয়ায় প্রতিপক্ষের ইন্ধনে বখাটেরা ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগীকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, শুক্রবার রাতে ভাটপাড়া এলাকার বাড়িতে প্রকৃতির ডাকে ঘর থেকে বাইরে যায় ওই কিশোরী। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা বখাটেরা শিক্ষার্থীকে মুখ চেপে পাশের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায় বারেক, সাজিদ ও ইমন নামের তিন বখাটে। পরে সাব্বির ও তুহিন নামে আরও দুজন যোগ হয়ে ওই কিশোরীকে সংঘবদ্ধ নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে পালিয়ে যায় বখাটেরা।
এ ঘটনায় ওই কিশোরীর নানী মোছা. জহুরা খাতুন বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সুজানগর থানায় মামলা করেছেন। বখাটে যুবক আব্দুল বারেক মন্ডল স্থানীয় ভাটপাড়া গ্রামের মো. উমেদ আলীর ছেলে। এ সময় তারা কিশোরীর স্বর্ণালঙ্কারও ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওই কিশোরীর।
ভূক্তভোগী কিশোরীর নানী বলেন, ভোটের ফলাফলের পর থেকেই নানাভাবে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। ৮ মে রাতে বিজয়ী আব্দুল ওহাবের সমর্থক কামরুজ্জামান দয়ালের নির্দেশে কিশোরীর মামার দোকানে ভাঙচুর চালায় বখাটেরা। হুমকি দেয়া হয় বাড়ি থেকে বিতারিত করার। সেই ঘটনার জেরেই শুক্রবার রাতে কিশোরীকে পরিকল্পিত ধর্ষণ করেছে তারা। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন>> ভোট কেনা-বেচার হাটে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আটক ১১
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, সন্তানতুল্য ওই কিশোরীকে এমন অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ। মনে হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই আমার অপরাধ হয়েছে। বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল ওহাবের নির্দেশে তার কর্মী সমর্থকরা সুজানগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। থানার ওসি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে পুলিশ তৎপর হলে এমন ঘটনা ঘটতো না।
তবে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি বিজয়ী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবের। তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে শাহীন ও তার সমর্থকরা সব কিছুকেই নির্বাচনী সহিংসতা বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পুলিশ অপরাধীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে, সেখানে আমাদের কোন বক্তব্য নেই।
সুজানগর থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে। সকল অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে। থানায় এ পর্যন্ত ১৪টি মামলা হয়েছে এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় প্রধান আসামি বারেকের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালেও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যাও করেন। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও এলাকায় ইভটিজিং, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আপন দেশ/আরএন/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।