ফাইল ছবি
১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। প্রথমে তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিতের বাড়িতে উঠেন। পরদিন চিকিৎসকের কাছে যেতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এমপি আনার। পরিবারসহ কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তবে ১৭ মে তার অবস্থান ছিল বিহারে।
কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ১৩ মে মোবাইল ট্র্যাকিং করে কলকাতার নিউমার্কেটে এমপি আনারের অবস্থান শনাক্ত করে ভারতীয় পুলিশ। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ ছিল। ১৭ মে তার অবস্থান ছিল বিহারে। তারপর থেকে আবারো তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
এমপি পিএস আব্দুর রউফ জানান, চিকিৎসার জন্য সড়কপথে একাই ভারতে যান তিনি। ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় গোপাল নামে এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেন। পরদিন তিনি বাইরে থেকে আসছি বলে বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। দুদিন পর অর্থাৎ ১৫ মে বন্ধু গোপালের কাছে মেসেজ পাঠান তিনি জরুরি কাজে দিল্লি এসেছেন; চিন্তার কারণ নেই।
এরপর ১৬ মে সকালে তার মোবাইলে এমপি আনারের বাংলাদেশের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে একটি মিসড কল আসে। তারপর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। যখন মিসড কলটি আসে, তখন এমপির অবস্থান ছিল বেনাপোল এলাকায়। যেটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, এমপি আনারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন—সেটা জানতে না পেরে আমরা উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন দফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে বাবাকে ফোনে না পাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যান এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করেন ডরিন। তার বাবার সন্ধানের জন্য তিনি ডিবির সহযোগিতা চান।
আরও পড়ুন>> ভারতে গিয়ে লাপাত্তা এমপি আনার
এমপির মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, তিন দিন ধরে আমার বাবাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার মোবাইল ফোনটি মাঝেমধ্যে খোলা পাই আবার মাঝেমধ্যে বন্ধ পাই। পরে এ বিষয়ে আমি হারুন (ডিবি প্রধান) আঙ্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। হারুন আঙ্কেল আমাকে বলেছেন, বিষয়টি তিনি দেখছেন। পরে আজকে আমি তার কার্যালয়ে আসি। হারুন আঙ্কেল আমাদের সহযোগিতা করছেন। বাবাকে ফোনে না পাওয়ার কারণেই মূলত আমি ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমি নিজেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত যাব।
এমপি আনার চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ভারতে যান কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাবার কানে গুরুতর সমস্যা আছে। তার একটি কান বন্ধ থাকে। এজন্য তিনি নিয়মিত ভারতে চিকিৎসা করান।
চিকিৎসার জন্য ভারতের কোন জায়গায় গিয়েছিলেন—এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাবা যাওয়ার আগে আমাদের বলেন, সংসদ বন্ধ তাই দুই থেকে তিন দিনের জন্য ভারতে যাবেন চিকিৎসার জন্য। ভারতের কলকাতায় তিনি প্রথমে যান, সেখানে এক আঙ্কেলের বাসায় উঠেন। পরে তিনি কলকাতার ওই আঙ্কেলের বাসায় রাতে থাকেন। পরের দিন সকালে বাবা কলকাতার ওই আঙ্কেলকে বলেন তার একটা কাজ আছে, সেজন্য তিনি বের হয়ে যান। এরপর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা আমাদের কলকাতার ওই আঙ্কেল জানিয়েছেন। এরপর আমরা বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের অনেকবার চেষ্টা করেছি। আমার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি, আবার মাঝেমধ্যে খোলাও পাচ্ছি; কিন্তু ফোন করলে কেউ ধরছে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা যোগাযোগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন এবং আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমার বাবা যেহেতু তিনবারের সংসদ সদস্য, সেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাকে ভালোবাসেন। সেহেতু সার্বিকভাবে তিনিও বিষয়টি দেখছেন।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল-আহসান বলেন, কালীগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা মৌখিকভাবে তার নিখোঁজের বিষয় আমাদের জানিয়েছে। যেহেতু ভারতের মধ্যে ঘটনা, তাই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।