ছবি: সংগৃহীত
উত্তরাঞ্চলে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাড়ভাঙা রোগীদের চিকিৎসার প্রধানতম ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) অর্থোপেডিক অ্যান্ড ট্রামাটিক সার্জারি বিভাগ। এ বিভাগে সবসময় রোগীর প্রচুর ভিড় থাকে। বারান্দাতেও অধিকাংশ সময় থাকে না তিল পরিমাণ ঠাঁই৷ বেড পাওয়া দুষ্কর৷
এখানে যারা প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যান, তারা বড়ই সৌভাগ্যবান। কারণ অপারেশনের প্রয়োজন পড়লেই চরম দুর্ভোগ অপেক্ষা করে। যার শেষ কখনো কখনো অমানবিক হয়ে থাকে।
সেবাপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাসপাতালের এ বিভাগে দুর্ভোগের টের পাওয়ার পর মোটামুটি সচ্ছল রোগীরা নিজেরাই রেফার্ড নিয়ে ঢাকায় চলে যান অথবা হাসপাতালের ডাক্তারদেরই বেসরকারি চেম্বারের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। কারণ হাসপাতালে অপারেশনের ডেট পাওয়া ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার শামিল!
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে যেসব রোগীদের অপারেশনের জন্য দুই-তিন মাস অবজারভেশনে থাকতে বলা হয়। ওই চিকিৎসকের বেসরকারি চেম্বারে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই অপারেশন হয়ে যায়৷
অন্যদিকে, নিম্নবৃত্ত আয়ের রোগীরা বাধ্য হয়েই অপারেশনের তারিখের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। সুপারিশ না থাকলে মাসের পর মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও মেলে না অপারেশনের তারিখ। এতে রোগীর ইনফেকশনসহ নানা ঝুঁকি তৈরি হয়।
বিভাগের অধীনে এক নম্বর ওয়ার্ডের রোগী সমেদা বেগম। তার বাড়ি নওগাঁ সাপাহারের শীতলডাঙা গ্রামে। তিনি জানান, গত ৫ মে গরুর আঘাতে তার পায়ের দুটি হাড় ভেঙে দেয়। ৬ মে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন৷ এরপর এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক অপারেশন করতে হবে জানিয়েছেন। কিন্তু ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও কবে অপারেশন হবে, কিছুই বলছে না। বাইরে চিকিৎসা করার সামর্থ্যও নেই তার। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন>> ড্রেনে ভাসছিল মানুষের আস্ত কাটা পা, অতঃপর..
আরেক রোগীর স্ত্রী শাহিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘এক মাস ২২ দিন ধরে অপারেশনের ডেটের জন্য ধর্ণা দিচ্ছি। রোগীর চাপ বেশি এমন কথা বলে ধৈর্য ধরতে বলা হচ্ছে বারবার। এদিকে রোগীর পায়ে ইনফেকশন বাড়ছে।’ আবেগ তাড়িত হয়ে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যেন বিপদ কাউকে না দেয়!’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাবা গত দুই বছর আগে দুর্ঘটনায় এক পা ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পরে বাসায় চলে যেতে বলা হয়। রোগীর চাপ কমলেই অপারেশনের তারিখ দেয়া হবে বলে জানান ডাক্তার৷ বাসায় নেয়ার কয়েকদিন পরই পায়ে ইনফেকশন বাড়তে থাকে৷
তিনি আরও বলেন, পরে বাধ্য হয়ে যে ডাক্তার হাসপাতালে দেখছিলেন, তার বেসরকারি চেম্বার নিয়ে যাই। তবুও হাসপাতালে অপারেশনের ডেট দেননি। এরপর তিন মাস পরে অপারেশন করা হয়৷ কিন্তু ততদিনে পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়৷ এখনো কয়েকমাস পরপর ওই ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যেতে হয়। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৬-৭ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের অর্থোপেডিক অ্যান্ড ট্রামাটিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুস সুবহানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহমেদের মোবাইলে কল করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘স্যার মিটিং আছে, এখন কথা বলবেন না।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের মোবাইলে কল করা কলে তিনি ফোন কেটে দেন। এ কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।