ছবি: আপন দেশ
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল আজহা ১৭ জুন। কোরবানিকে ঘিরে খামারিদের মনোযোগ পশু মোটাতাজাকরণে। তবে অবৈধ পথে ভারতে থেকে গরু আমদানির শঙ্কায় পাবনার খামারিরা। এদিকে চড়া গোখাদ্যের দাম। ন্যায্যমূল্য পাবার প্রশ্নে এবার কোরবানির পশুর দাম বাড়তে পারে বলছেন অনেকে। অন্যথায় গুণতে হবে লোকসান।
স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এক বছর ধরে গোখাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, যা নাগালের বাইরে। এখন কোরবানির মৌসুম ঘিরে দাম আরও বাড়ছে। ভুসি, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, চিটাগুড়, ধানের কুড়া, খুদসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে এবার গরুর প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
পাবনার জালালপুর এলাকার খামারি রাজু জানান, এবারও খামারে ৩২টি গরু রয়েছে। এগুলোর ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৮ মণ। এর মধ্যে আমার খামারের ‘পাঠান’ নামের ষাঁড়টি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে শাহিওয়াল ও ব্রাহামাসহ তিনটি জাতের মধ্যে দেশসেরা হয়েছে। ব্যাপারটি দারুণ সুখকর। কিন্তু ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কমবেশি ক্রেতা সমাগম থাকলেও আশানারুপ দাম বলছেন না। যে হারে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে তাতে লাভ নিয়ে চিন্তা করতেই হচ্ছে।
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার খামারি মাহফুজা খানম বলেন, শুনছি কোরবানির জন্য লালন পালন করা পশু এবার দ্বিগুণ। আবার ভারত থেকেও গরু ঢুকতে পারে। চড়া দামে খাদ্য কিনে খামারে চারটি ষাঁড় পালন করেছি। একেকটির ওজন ২০ থেকে ২২ মণ। ১৬ লাখ টাকায় এগুলো বেচার ইচ্ছা আছে। কিন্তু সঠিক দাম পাব কিনা সেটা নিয়েই এখন চিন্তা। তাছাড়া অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে খামারে এসে দরদাম করলেও এবার ব্যাপারিরা খুব কম আসছেন।
এদিকে একাধিক ক্রেতা ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন পশুর হাটে কোরবানির আগেই তুলনামূলক চড়া দামে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ব্যাপারী বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনতে শুরু করেছেন। তারা পশুর হাটগুলো থেকেও গরু কিনছেন। মৌসুমি ব্যাপারীরা এসব গরু কিনছেন মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রির আশায়।
আরও পড়ুন>> আলীকদমে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার
বাড়ি ও খামারে ঘুরে গরু কেনা ব্যবসায়ীরা জানান, বেশি দামে গোখাদ্য কিনে খাওয়ানোর ফলে খামারিরা গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন। এতে করে আগে তারা বেশি পশু ক্রয় করলেও এবার কম ক্রয় করতে হচ্ছে। কারণ দাম বেশি হওয়ায় গরুর বাজার আঁচ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে লোকসানের ভয়ও রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার কোরবানির গবাদিপশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪টি। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০টি। এছাড়া ছাগল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০০, মহিষ ৮ হাজার ৩৪ ও ভেড়া ৬৬ হাজার ৯১৬টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার উপজেলাটিতে কোরবানি উপযোগী মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৩৯টি।
এদিকে জেলায় এবার কোরবানিতে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৬টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এদিক থেকে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩ লাখেরও বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাংগ কুমার তালুকদার জানান, চাহিদার তুলনায় জেলায় এবার দ্বিগুণ কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অতিরিক্ত পশুগুলো দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদাও কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে।
পশুপালনে ব্যয় ও দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, শুরু থেকেই এবার গোখাদ্যের দাম কিছুটা বেশি। এর ফলে পশু পালনে খামারিদের ব্যয়ও বেড়েছে। সেদিক থেকে ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা লোকসানে পড়বেন।
আপন দেশ/আরএন/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।