ছবি: সংগৃহীত
ভারী বৃষ্টিতে বাসাবাড়ি, দোকানপাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডুবে গেছে সিলেট নগরের শতাধিক এলাকা। সোমবার (৩ জুন) বিকেলের দিকে কয়েকটি এলাকার পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা ছিলেন পানিবন্দি। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় লোকজন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ১৪ বছরে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকার কাজ করেছে সিটি কর্পোরেশন। এর বাইরে চলতি বছর তিনটি ড্রেন নির্মাণে খরচ হয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি আরও ৫৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। সম্প্রতি ৩০০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এছাড়া পাউবো সুরমা নদীর নগর অংশ খননে খরচ করছে ৫০ কোটি টাকা।
এদিন সিলেট নগরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পর নগরের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতা দূর করতে সিটি কর্তৃপক্ষ ও পাউবো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার বদলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে জলাবদ্ধতার সংকট আরও বেড়েছে। তাহলে এত টাকা খরচ করে নগরবাসীর কী লাভ হলো, এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে নগরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর ঠিক দুই বছর পর গতকাল আবারও নগরে একই চিত্র দেখা যায়।
হাজার কোটি টাকা খরচের পরও নগর জলমগ্ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম)। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিশ্চয়ই ঘাপলা ও দুর্নীতি আছে। না হলে এত টাকা খরচের পরও কেন শহর ডুববে? অতীতেও সিলেটে প্রচুর বৃষ্টি হতো, তবে এমনভাবে শহর কখনোই ডোবেনি। এখন প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে, আবার শহরও ডুবছে।
গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কিছু এলাকা থেকে পানি সরে গেছে। তবে বেশির ভাগ এলাকা এখনো জলমগ্ন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সাড়ে ১৮ ঘণ্টায়ও নগরের উপশহর, তেরোরতন, কুশিঘাট, সোবহানীঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়সহ অন্তত ৬০টি এলাকা থেকে পানি সরেনি।
সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি আছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। বন্যাকবলিতদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন
নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, যদি নদী ও ছড়া (প্রাকৃতিক খাল) পরিকল্পিতভাবে আরও সুগভীর করার পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করা হতো, তাহলে নগরের বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নিত না। নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলো যথাযথ খননের অভাবে পানির ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ছড়া খনন, ছড়ার পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ইউটাইপ ড্রেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নালানর্দমা প্রশস্তকরণসহ জলাবদ্ধতা নিরসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছর একই খাতে সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও প্রায় ৫৫ কোটি টাকার কাজ চলছে।
এর বাইরে নগরে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩০০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প সম্প্রতি অনুমোদন হয়। টাকা বরাদ্দ পেলেই এ কাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রকল্প ঠিকভাবে হয়েছে বলেই এখন আগের তুলনায় জলাবদ্ধতা কমেছে। এখন চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে সুরমা নদী পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকায় নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালের পানি নামতে পারছে না। জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে সুরমা নদী খনন ও শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে।
পাউবো সিলেট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের বন্যার পর সুরমা নদী খননের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নগরের কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত যেসব স্থানে চর জেগেছে, তা কেটে অপসারণ ও খননের উদ্যোগ নেয় পাউবো। প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশে এ খননের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, চলতি জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যথাযথভাবেই এ প্রকল্পের কাজ চলছে। অথচ গত বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধনের সময় সে বছরের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের আশঙ্কা, নদী খনন নিয়ে কোনো নজরদারি না থাকায় প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা জলে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।