ব্রিজ নির্মাণের প্রতিবাদে স্থানীয়দের মানববন্ধন। ছবি: প্রতিনিধি
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ হবে। জনস্বার্থ বিবেচনা না করেই মাত্র তিনটি পরিবারের চাহিদায় এ সরকারি ব্রিজের অনুমোদন দেয়া হয়। ওই এলাকার কামরুজ্জামানের প্রভাবে এ অনুমোদন দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এ অভিযোগে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। তারা কাজ বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠিও দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, কয়েক মাস আগে ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ৩২ ফিট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণের অনুমোদন দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। পরিপত্র জারি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। পাকা সড়কসহ অবকাঠামোগত নানা সংকট রয়েছে। তবে মাত্র তিনটি পরিবারের জন্য অর্ধকোটি টাকার ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টিকে সরকারি অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামে কাগেশ্বরী নদীর পাশে ওই বিজ্রের অনুমোদন হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান পূর্বে ঢাকা উত্তরা রাজউক কলেজের কম্পিউটার ডেমোরেস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন দফতরের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়াতেন। সেখান থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)সহ বেশ কয়েকটি দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্যতা। সেই সুবাদে এলাকার স্বার্থকে তুচ্ছ করে নিজের পারিবারিক সুবিধার জন্য এ ব্রিজের অনুমোদন করিয়ে নেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকারে আসবে না। উল্টো পাউবোর কৃষি জমিতে সেচ, জলাবদ্ধতা দূরকরণ ও জলপথে সহজে ফসল আনা নেয়ার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এতে প্রায় ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নির্মাণস্থলে সবগুলোই ব্যক্তি মালিকানা জমি। কাজের পরিপত্র অনুযায়ী, নির্মাণ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের সুযোগ নেই। তবুও জোরপূর্বক ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর ব্রিজ নির্মাণে কামরুজ্জামান ও তার পরিবার চাপ দিচ্ছেন জমি মালিকদের।
এ ব্যাপারে জমির মালিক ওয়াদুত মাওলানা বলেন, এলাকার স্বার্থে নয়, পরিবারের স্বার্থে সরকারের অর্থ অপচয় করা হবে। এজন্য আমাদের নিজের জমি দিতে বলা হচ্ছে। এটি কীভাবে সম্ভব? ব্যক্তি স্বার্থে এক ইঞ্চি জমিও দিব না। সরকারি কাজ জনস্বার্থে হওয়া উচিত। দফতরগুলোর এগুলো ভালো করে তদারকি ও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন>> ছাগলের দোষে জামাইকে কুপিয়ে হত্যা
স্থানীয় শাহজাহান মাস্টার বলেন, এলাকায় ফসল আনা নেয়ার রাস্তাঘাট নেই। সেগুলো না দেখে কামরুজ্জামানের নিজ পরিবারের জন্য সরকারি টাকায় ব্রিজ নিচ্ছে। এগুলো নিছক সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সংশ্লিষ্ট দফতরকে এমন কাজের অনুমোদন দ্রুত বাতিল করে জনস্বার্থমূলক কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আলম ব্যাপারী ও ময়নুলসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন বলেন, বলা হচ্ছে খালের ওই পাশের মসজিদে মুসল্লি আসা যাওয়ার জন্য এ ব্রিজ করা হচ্ছে। এটি মিথ্যা কথা। মসজিদে যাওয়ার জন্য পাশেই বিকল্প রাস্তা আছে। তাছাড়া এর ২০০ মিটার দূরত্বে একটি ব্রিজও রয়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যক্তি জমির ওপর দিয়ে এ ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহ ব্যাহত হবে। জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, ফসল আনা নেয়াও ব্যাহত হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে মো. কামরুজ্জামান বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা। কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান। ইউএনও সুপারিশ করেছেন। ওটি তিনটি নয় প্রায় ২০/৩০টি বাড়ির একটি পাড়া। ওই পাড়াটিকে খালের এপারের সঙ্গে সংযুক্ত করতেই কাজটির অনুমোদন হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানি না। এগুলো নিয়ে একটি মহল গোলমালের চেষ্টা করছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এগুলো এলাকার উন্নয়ন পরিপন্থি।
এদিকে নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাঁথিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মুলতান হোসেন নির্মাণস্থল পরিদর্শনে যান। সেখানেও এ কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কাজটির অননুমোদন দেয়া বা বাতিল করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তদারকির মাধ্যমে আমরা শুধু কাজটি বাস্তবায়ন করবো। যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। আপাতত কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
আপন দেশ/এনআর/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।