ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি নৌযানের দিকে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসে গুলি। টানা সাত দিন ধরে চলছে এ পরিস্থিতি। সেন্টমার্টিন কার্যত বিচ্ছিন্ন। টেকনাফ-টেকনাফ রুটে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এর মধ্যে তিন দফা গুলির ঘটনা ঘটেছে। এমন অবস্থায় সেন্টমার্টিনের প্রায় ১০ হাজারের মতো অধিবাসী খাদ্য ও নিত্যপণ্য নিয়ে সংকটে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠাও কাজ করছে।
গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ শেষে ফিরছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ সময় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে তাদের স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। ৮ জুন সেন্টমার্টিনে ইট-বালু ও খাদ্যসামগ্রী বহনকারী ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১১ জুন) সেন্টমার্টিনগামী রোগীবাহী স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। মিয়ানমারের সৈন্যরাই গুলি চালিয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
উপকূলীয় জলসীমায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে কোস্ট গার্ড। বিষয়টি নিয়ে কোস্টগার্ড সদর দফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছে। এ নিয়ে কোস্টগার্ড কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সেক্টর পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদান করেছে। সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, প্রথম ঘটনার দিনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। মঙ্গলবারের ঘটনার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে আবারও প্রতিবাদ জানাব। রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। ওই এলাকা কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটিও পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে।
স্পিডবোট মালিক সৈয়দ আলম বলেন, আগের গুলির ঘটনার পর গত পাঁচ দিন আমরা নদীতে যাইনি।
কারা গুলি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু আজকে যখন ছোট ছোট নৌযান নিয়ে আমাদের স্পিডবোটে গুলি করা হয়, তখন সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাহাজ ছিল। ধারণা করছি, জান্তার সৈন্যরাই এটা করছে। আমরা এখন সেন্টমার্টিনে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। তারা উপকূলে চলে এসেছে। ওই এলাকায় বিজিবি বা কোস্টগার্ডের কোনো টহল নেই। ফলে জান্তারা যেকোনে সময় সেন্টমার্টিনেও চলে আসতে পারে।
আরও পড়ুন>> সেন্টমার্টিনের ১০ হাজার মানুষ ‘বড় বিপদে’
এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায়, বেশি সমস্যায় পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় দ্বীপের দোকানগুলোতে মজুত খাদ্যপণ্য শেষের পথে। এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন দ্বিগুণ।
দ্বীপের মুদির দোকানি আমিনুল ইসলাম বলেন, ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আনতে পারেনি। ফলে দোকানে থাকা সবকিছু শেষের পথে। শুধু চাল ছাড়া কোনো মালামাল নেই। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে মানুষের মাঝেও খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরনের অভাব দেখা দিতে পারে দ্বীপে। শুধু তাই নয়, আমাদের কোনো রোগ ব্যাধি হলেও বিনা চিকিৎসায় এখানে মরতে হবে। এ পরিস্থিতি তো দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমি নিজে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।
টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট, ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপৎকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি নিজে নৌযানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুই দিন আগে কক্সবাজারের ডিসি অফিসেও বৈঠক হয়েছে। আমরা নৌযান মালিকদের ডেকে বলেছি, বিকল্প রুট দিয়ে আপাতত খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।