ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলবার (১১ জুন) বেলা ১১টা। টেকনাফ সদর ইউপির ডেইলপাড়ার একটি দোকানে বসে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। এ সময় বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে দোকান। এতে কিছুটা ছেদ পড়লেও আলাপ চালিয়ে নিচ্ছিলেন তারা। তিন মিনিটের মাথায় ফের বিস্ফোরণ। বিরক্তি নিয়ে একজন বলে ওঠেন, বার্মার শেলের শব্দে শান্তিতে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। ঘরের মাটির দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীরে ফাটল ধরেছে। রাতেও শান্তি নেই, দিনের চেয়ে বিস্ফোরণ রাতে আরও বেশি।
গতকাল বুধবার রাত থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল বিস্ফোরণের তাণ্ডব চলছে। নাফ নদীর ওপারে টেকনাফ সীমান্তের পূর্বে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে ভেসে আসছে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ। কেঁপে উঠছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কোরবানির ঈদের আগে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে দু’দ্বীপে।
মিয়ানমারের আকাশসীমায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এ পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এদিকে খারাংখালী, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধের পরে কোরবানি ঈদের আগে এ প্রথম কোনো বড় ধরনের মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে টেকনাফ।
শাহপরীর দ্বীপ বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গণি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ১০-১৫ মিনিট পরপর মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে আমরা আতঙ্কিত হয়ে রাত জেগেছিলাম। এতদিন বন্ধ থাকলেও আজকে রাতে নতুন করে বেশি বিস্ফোরণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> সেন্টমার্টিন বিচ্ছিন্ন, উৎকণ্ঠায় ১০ হাজার বাসিন্দা
এ বিষয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, ভোর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল বিস্ফোরণের ভারি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তবে এলাকার সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসরত লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ায় জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
সাবারাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসনাইন বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্তের এপারে টেকনাফ সাবারাং শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সে দেশের আকাশে যুদ্ধবিমানও দেখা গেছে। জলসীমায় সে দেশের জাহাজ দেখা যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সারারাত মিয়ানমার থেকে ফের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না।
এদিকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। ফলে সাত দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ওষুধ, খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছেন দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচলের বিকল্প রুট খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।