ছবি: সংগৃহীত
সিলেটে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই টিলার নিচে ঘর নির্মাণ করে বাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড় টিলা ধসের শঙ্কা দেখা দিলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তারা। ফলে প্রাণহানির শঙ্কাও বেড়েছে। ২০১২ সালে টিলার পাদদেশের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার উচ্চ আদালতের আদেশ এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।
সোমবার (১০ জুন) নগরীর মেজরটিলা এলাকায় টিলা ধসে একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হন। আহত হন আরও চারজন। প্রায় ছয় ঘণ্টার অভিযানে মাটিচাপা পড়া নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে সোমবার রাতে সিলেটের শাহপরান থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন নিহত আগা করিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মো. আগা রফিক উদ্দিন। এছাড়া এ দুর্ঘটনার পর টিলার পাদদেশে বসবাসরতদের সরাতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন>> সিলেটে পাহাড় ধসে নিখোঁজ ৩
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৮৭৫ টিলা ছিল। যার আয়তন ছিল ৪ হাজার ৮১১ একর। টিলা-পাহাড়ের যে আয়তনের কথা বলা হচ্ছে, তা সিলেটের একটি চা-বাগানের মধ্যেই আছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এমন তথ্য নথিভুক্ত ও গণমাধ্যমে সরবরাহ করছে সরকারের এ অধিদফতর।
তবে আয়তন যাইহোক, এখন এসব টিলা ক্রমশই বিলীন টিলাখেকোদের আগ্রাসী থাবায়। টিলা গ্রাসের সঙ্গে হচ্ছে প্রাণহানিও। এক দশকে টিলাধসে জীবন্ত সমাধি হয়েছে প্রায় ৪০ জনের। তারপরও থেমে নেই এ মৃত্যুমিছিল। প্রতিবছরই বর্ষার শুরুতে প্রাণ হারাচ্ছেন টিলার পাদদেশের বাসিন্দারা। প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব পালনের অনেকটা ইতি টানে প্রশাসন।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আখতার জানান, ১২ বছর আগের উচ্চ আদালতের রায় দ্রত বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। উভয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অথচ তারপরও থামেনি টিলা কাটা, টিলার পাদদেশের বাসিন্দারা মাটিচাপা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আমরা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। সোমবার টিলাধসে একই পরিবারের তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে প্রধান করা হয়েছে একজন এডিসিকে।
পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, অফিসের সঙ্গে আলাপ না করে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারছি না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম) দাবি করছেন, পরিবেশ অধিদফতরের করা সিলেটের পাহাড়-টিলার হিসাবেই গড়মিল আছে। সঠিক তথ্য আড়াল করা হয়েছে হীন উদ্দেশ্যে। সিলেট নগর ও জেলায় গত এক দশকে টিলাধসে ৪০ জন মারা গেছেন।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।