ছবি: সংগৃহীত
বিনাচিকিৎসায় গতকাল বৃহস্পতিার চিরত চলে গেলেন সহধর্মীনি তোহরা খাতুন (৫৫)। মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ। একাধিক রোগে আক্রান্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামও। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগে চিকিৎসার জন্য। টাকার অভাবেই চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অথচ রাষ্ট্রীয় ফাণ্ডে পেনশনে প্রায় তিন লাখ টাকা আছে যশোরের এ মাদ্রাসা শিক্ষকের।
অবসরে যাওয়ার চার বছর পরও পেনশনের টাকা পাচ্ছেন না। মাসের পর মাস বিভিন্ন দফতর ঘুরে পেনশনের টাকা না পেয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন তিনি। নজরুল ইসলামের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার উত্তর শ্রীরামপুরে।
দীর্ঘদিন ধরে নজরুল ইসলামের স্ত্রী তোহরা খাতুন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারা তোহরা এতদিন বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
জানা যায়, নজরুল ইসলাম ৩৫ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। বছর চারেক আগে অবসরে যান তিনি। কিন্তু চার বছরেও পেনশনের কোনো টাকা পাননি তিনি। পেনশনের টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এ মানুষ গড়ার কারিগর। তার এক মেয়েও অসুস্থ।
নজরুল ইসলাম জানান, ১৯৮২ সালে শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৮৪ সালে বাঘারপাড়ার এমপিওভুক্ত খানপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে ২০২০ সালের ২১ জুন অবসর গ্রহণ করেন নজরুল। অবসরে যাওয়ার পর কল্যাণ তহবিলের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেলেও পেনশনের টাকা পাননি তিনি।
তিনি বলেন, অর্থের অভাবে আমার অসুস্থ স্ত্রী ও মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রতি মাসে চিকিৎসার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। বাঘারপাড়ার একটি এনজিওতে ৩ হাজার টাকা বেতনে একটি চাকরি নিয়েছি। তাই দিয়ে আপাতত কোনোরকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমার পরিবারের তিন সদস্যের সবাই রোগী। পেনশনের টাকার জন্য কয়েকবার ঢাকার ব্যানবেসে গিয়েছি। সেখান থেকে আমার কাগজপত্র অস্পষ্ট বলে ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ছাত্র অনেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ-বিদেশে চাকরি করছে। কেউ আজ পর্যন্ত আমার খোঁজখবর নেয়নি। সম্প্রতি আমি ফেসবুক লাইভে এসে কথা বললে অনেকে যোগাযোগ করেছে, সহোযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেউ এখনও সহযোগিতা করেনি। আজ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেল।
বাঘারপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কিছুই করার ছিল না। পেনশনের জন্য ওই মাদ্রাসার সভাপতির স্বাক্ষরসহ ঢাকা কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। তার স্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।
আপন দেশ/এসি/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।