Apan Desh | আপন দেশ

বরগুনায় ব্রিজ ভেঙে ৯ কনেযাত্রী নিহত যে কারণে

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৪ জুন ২০২৪

আপডেট: ২০:২৭, ২৪ জুন ২০২৪

বরগুনায় ব্রিজ ভেঙে ৯ কনেযাত্রী নিহত যে কারণে

ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার আমতলিতে লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাসের ৯ কনেযাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। ঝুঁকিপূর্ণ একটি সেতু দীর্ঘদিনেও কেন সংস্কার করা হলো না? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণেই ব্রিজ ভেঙেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তারা জানান, ২০০৮ সালে যখন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়, তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তাতে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি। এরপরও নির্মাণ করা হয়। গত ১৬ বছরে একবারের জন্যও সেতুটি সংস্কার করা হয়নি।

জানা গেছে, উপজেলার হলদিয়া ও চাওরা ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থানে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ব্রিজটির অনুমোদন দেয়া হয়। হালকা যান (ফুটওভার ব্রিজ) প্রকল্পের আওতার বিজ্রটির দৈর্ঘ্য ৮৫ মিটার। ২০০৮ সালের ৩১ অক্টোবর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পর একবারও সংস্কার করা হয়নি। ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন>> বরগুনায় সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে, বরযাত্রীসহ নিহত ১০

বিপদ এড়াতে সেতুর পাশে বিপদজনক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। আর গাড়ি চলাচল না করার জন্য পুঁতে রাখা হয় গাছ। মানুষের জান-মালের কথা ভেবে গাছটি পুঁতে রাখা হয়। কিন্তু পরে সেটি তুলে ফেলা হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এজন্য সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে সেতু নির্মাণের সময় অনিয়ম করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বারবার অভিযোগ করেও এর প্রতিকার মেলেনি। ব্রিজ দিয়ে ভারী পণ্য সরবরাহ করা হতো। যে কারণে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অবৈধ পরিবহন নিয়েও অভিযোগ করেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি। যান চলাচল রোধে পুঁতে দেয়া গাছের গুঁড়ি অবৈধ যানবাহনের ‍কিছু চালকরা তুলে ফেলে।

ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।

আমতলী থানার ওসি কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, অবৈধ যান চলাচল রোধে তারা সচেষ্ট রয়েছেন।

এলজিইডির আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। তারপরও যতদূর জানি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের এ এলাকা লবণাক্ত হওয়ায় সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত স্টিল স্টাকচারে মরিচা ধরেছে।

তিনি বলেন, আমরা আগেই এ সেতুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সেতুর দুদিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ও প্রবেশমুখে গাছ পুঁতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাহিন্দ্র গাড়ি বা অন্য ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে রাতের আঁধারের কে বা কারা তা সরিয়ে ফেলেছে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও ইঞ্জিনিয়ারের সাইনবোর্ড দেয়ার পর তাদের সাইনবোর্ডের গুরুত্ব বোঝা উচিত ছিল।

বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে সেতু ধসের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করা যাবে।

আরও পড়ুন>> প্রেমিকা নিয়ে দ্বন্দ্বে বিশেষ অঙ্গ কাটা সেই বেলালের মৃত্যু

প্রসঙ্গত, বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে ৯ কনেযাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচরের সাবেক সেনাসদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজ। শনিবার (২২ জুন) দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া হাট ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস ও অটো খালে ডুবে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মাহাবুবের ভাই সোহেলের স্ত্রী রাইতি (৩০), মাহাবুবের মা ফরিদা বেগম (৪০), মামি মুন্নি বেগম (৪০), তার সন্তান তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), আরেক মামি ফাতেমা বেগম (৪০), রুমি বেগম (৪০)। এছাড়া আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া ও মেয়ে রিদি (৫)। তারা কনে হুমায়রার মামার বাড়ির আত্মীয়-স্বজন। 

এ ঘটনায় নির্মাণকারী ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়