ছবি: সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন করায় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে হামলা, মামলা, মারপিটে প্রাণ বাঁচাতে ৪ মাস বাড়ি ছাড়া ছিল দেড় শতাধিক পরিবার। সরকার পতনের পর বাড়ি ফিরলেও সন্ত্রাসীদের নির্মমতা আর লুটপাটে তারা নিঃস্ব, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
ভুক্তভোগীরা জানান, বিএনপি সমর্থক অধ্যুষিত চরগড়গড়ি পশ্চিমপাড়ার ভোটারদের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে পছন্দের প্রার্থী না থাকায় ভোট কেন্দ্রে যাননি গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্ত্রাসী বাহিনী জোরপূর্বক ফসল কেটে নেয়, দখলে নেয় জমি।
গত ১৯ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে কয়েকজন গ্রামবাসীর হাত পা কেটে নেয়াসহ গুরুতর জখম করে। নিহত হয় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা খায়রুল। ধারাবাহিক হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ না নিলেও, খায়রুল নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলায় আসামি করা হয় নিরপরাধ অধিকাংশ গ্রামবাসীকে। মামলার ভয় ও বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে ভিটে মাটি ছাড়েন তারা। তিন মাস ধরে তাদের বাড়ি, দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার চরগড়গড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামটির প্রায় প্রতিটি বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাড়ির দরজা, জানালা থেকে শুরু করে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া লুট করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গ্রামে ফিরে সাজানো সংসারের কিছু খুঁজে পাননি তারা। এ ভরা বর্ষায় খোলা আকাশের নিচে কাটছে দিন। নতুন সরকারের কাছে নিরাপত্তা ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বসতভিটা হারানো দোয়াত প্রামাণিক জানান, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা। আমার হাত কেটে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়। খায়রুল ইসলাম নিহত হন। এরপর থেকে আমাদের বাড়ি থেকে মারধর করে বের করে দেয়। লুটে নেয় বাড়ির সব কিছু। আমরা এখন নিঃস্ব। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিচার চাই ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন এলাকা ছাড়া। তবে হামলায় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও সাহাপুর ইউপি ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মিলন প্রামাণিক জানান, লুটপাটের ঘটনা স্বীকার করলেও কিছুই করার ছিল না। ঘটনার দিন হামলাকারীরা সশস্ত্র অবস্থায় এসেছিল। আমি তাদের নিষেধ করলে তারা আমাকেই হত্যা করতো। তাই প্রতিরোধ করতে পারিনি। তবে, হামলা লুটপাটে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।