Apan Desh | আপন দেশ

পাবনার চাঁদাবাজ চেয়ারম্যান বাবুর গ্রেফতার দাবি

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২২ অক্টোবর ২০২৪

পাবনার চাঁদাবাজ চেয়ারম্যান বাবুর গ্রেফতার দাবি

ফাইল ছবি

নানা অনিয়মে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, সালিশ বাণিজ্য, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার কাশীনাথপুর, আমিনপুর বাজার, নগরবাড়ী ও কাজীরহাট ঘাট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি করেন তিনি। বাবু এসব ঘাট থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন। সরকার পরিবর্তনের পর এলাকা ছেড়ে পালানো এ চেয়ারম্যান ও তার ভাই মোকলেছুর রহমানের শাস্তির দাবিতে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একসময় দোকানের কর্মচারী ছিলেন রেজাউল হক বাবু। আর তার ভাই মোকলেছুর ছিলেন টেম্পু চালক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে তিনি জাতসাখিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন। পরে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময়ে তার ও বাবু চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম শুরু করে।

বাবু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে চাঁদাবাজি করতেন। বিশেষ করে নগরবাড়ী ও কাজীরহাট ঘাটে। এ ছাড়া অবৈধভাবে জমি দখল, মাছের খামার তৈরি ও সালিশ বাণিজ্য করে নিজেদের খেয়ালমতো রায় দিতেন। বাবু ও তার বাহিনী সৈয়দপুর গ্রামের অসংখ্য বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এলাকাবাসীকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। নারীদের ওপরও চলেছে অমানবিক নির্যাতন।

নগরবাড়ি ঘাটের ব্যবসায়ী আরশেদ আলী বলেন, রেজাউল হক বাবুর ভয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঘাটে আসতে পারছেন না। বাবু ও তার সহযোগীদের কাছে অতিরিক্ত চাঁদা দিতে হতো। যে কারণে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব যায়। আইন অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের ঘাট ইজারা নেয়ার সুযোগ ছিলো না। তবে বাবু তা উপেক্ষা করে নিজের নামে ঘাট ইজারা নিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বাবু নির্বাচনকালীন সময়ে বিআইডব্লিউটিএ-র সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দেয়। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি মনোনয়ন ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। 

অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। সৈয়দপুর গ্রামে অসংখ্য বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যেখানে নারী ও বৃদ্ধদের উপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। বাবু এলাকায় জমি দখল করে মাছের খামার তৈরি করেন। 

এক সময় টিনের ঘরে বাস করলেও বাবু উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে নিজের গ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি করেছেন। ঢাকার বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট ও পাবনা শহরে বেশ কিছু জমি কিনেছেন তিনি। 

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য-

সৈয়দপুর গ্রামের বৃদ্ধা হক সাহেব জানান, তার মেয়ের মৃত্যু নিয়ে সালিশ করে বাবু ও মুকু গহনা ও জরিমানার অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

একই গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, বাবু ও তার সন্ত্রাসীরা আত্রাই নদী দখল করে। এলাকায় কাউকে নদীর পাড়ে নামতেও দেয়নি। এমনকি একবার এক মরা বোয়াল মাছের জন্য একজনকে মারধর ও জরিমানা করে মাছটিও ছিনিয়ে নেয়।

নুরুল ইসলাম মাস্টার অভিযোগ করেন, বাবু তার বাড়ি ও জমি দখল করে অন্যায়ভাবে বিক্রি করে। প্রতিবাদ করলে তাকে ও তার ভাইকে মারধর করা হয়।

বেড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সবুজ বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাবু ও তার গুন্ডা বাহিনীর অত্যাচারে বিএনপি ও ভিন্নমতের লোকেরা এলাকায় থাকতে পারেনি।

ছাত্র নেতা রাকিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাবুর নেতৃত্বে হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। বাবুর গুণ্ডাবাহিনী নানা অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। যা তাদের নিম্নবিত্ত জীবনযাপন থেকে বিস্তৃত। স্থানীয় জনগণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বাবু বাহিনীকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি তাদের সম্পদের উৎস তদন্তেরও আহবান জানান।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়