Apan Desh | আপন দেশ

বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য: মা ইলিশ রক্ষা অভিযান হুমকিতে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ১৯:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য: মা ইলিশ রক্ষা অভিযান হুমকিতে

বালু উত্তোলন চলছে। ছবি আপন দেশ

পটুয়াখালী জেলার রাবনাবাদ ও পাটুয়া নদীসহ বিভিন্ন চরে অবাধে বালু কাটা হচ্ছে। এতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে বালু উত্তোলন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বালু উত্তোলন ইলিশ মৌসুমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। মা ইলিশ সাগর থেকে নদীর মিঠা পানিতে এসে ডিম ছাড়ে। যা পরে জাটকা হিসেবে রূপ নেয়। এ প্রক্রিয়ায় ইলিশের বংশবিস্তার ঘটে। এ সময়ে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ড্রেজিং ও বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য। তবে সে সিদ্ধান্ত অমান্য করে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা।

জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি প্রশাসনিক বালু উত্তোলন বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা তা অমান্য করে চলেছে। পটুয়াখালীর নদী ও সাগর মোহনার মাঝখানে স্থায়ীভাবে নোঙর করা ড্রেজার থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলিত হচ্ছে। যা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রশাসন নীরব। স্থানীয়রা দাবি করছেন, এটি প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জানান। যাতে ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজনন রক্ষা করা যায়।

বালু উত্তোলনের কারণে কলাপাড়া ও রাংগাবালী উপজেলার নদীর তীরের মানুষ আতঙ্কিত। স্থানীয় জেলেরা জীবিকা নির্বাহে হুমকিতে পড়েছে। বালু উত্তোলনে অনেকের ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে।

নদীতীরের চালিতাবুনিয়া মৌজার বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা বাধা দিতে গেলে রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি পেতে হচ্ছে।

এদিকে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের কর্মচারীরা জানান, গত তিন মাস ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। প্রতিদিন ৫-৬টি বাল্কহেড ভর্তি করছেন। 

রাইয়ান এন্টারপ্রাইজের চালক বলেন, আমরা কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। কাগজপত্রের ব্যাপারে কিছু জানি না।

এ বছর কলাপাড়া ও রাংগাবালীতে সরকারি ইজারা নেই, তবুও অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে। এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লোকমান আলী বলেন, ইলিশের প্রজননকালীন সময়ে ড্রেজার বন্ধ রাখা জরুরি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন ড. নুরুল আমিন করে বলেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা পরিবর্তন করে ভাঙন সৃষ্টি করছে। যা স্থানীয়দের জন্য বিপজ্জনক। পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ইলিশের অবাধ প্রজনন নিশ্চিত করতে নদীতে সকল ধরনের ড্রেজিং বন্ধ রাখতে টাস্কফোর্স কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট বালু মহাল ছাড়া ড্রেজিং হলে নদীর তীর ভাঙার প্রবণতা দেখা যায়।

এদিকে লোড ড্রেজার মেসার্স তায়্যিবা এন্টারপ্রাইজের মালিক এসএম শিপন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে অবৈধ বালু কাটার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখান।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম চলাকালে ড্রেজিং নিষিদ্ধ। তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

জেলা প্রশাসক আবুল হাসানাত মোহাম্মদ আরেফিন জানান, বৈধ ও অবৈধ বালু মহলগুলোতে বালু উত্তোলন হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। 

এখন প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের অপেক্ষায় স্থানীয় জনগণ। 
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়