ফাইল ছবি
সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। তবুও সাঁথিয়া উপজেলার ইউএনও জাহিদুল ইসলাম স্কুলে স্কুলে বই বিতরণ করছেন। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার নামে চড়ামূল্যের এসব বই বিক্রি করা হচ্ছে। বই কিনতে শিক্ষকরা বাধ্য হচ্ছেন। এ বই নেয়ায় আপত্তি জানালেই নানা কারণ দেখিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে শোকজ করাচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের।
অভিযোগ রয়েছে, সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে বই নেয়ার জন্য টাকা আদায় করছেন। সরকার পতনের আগে ইউএনও ঢাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকার বই কেনেন। পরে তা স্থানীয় স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়। প্রতিটি স্কুল থেকে ৩ হাজার টাকা নেয়া হয় বইয়ের বিনিময়ে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। তবুও শিক্ষকদের বই কিনতে বাধ্য করা হয়। যারা বই কিনতে আপত্তি জানিয়েছিলেন তাদেরকে নানা কারণে শোকজ করা হয়। সাঁথিয়া উপজেলার ১৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ স্কুলেই এভাবে বই বিতরণ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে কোনো আপত্তি মানেননি। যারা বই নিতে চাইনি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। এমনকি সহকারী শিক্ষা অফিসার সুলতান মাহমুদকেও ছাড় দেয়নি। তাকেও শোকজ নোটিস দেয়া হয়েছে।
সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, তাদের বাধ্য করা হয়েছে ইউএনও অফিস থেকে বই নেয়ার জন্য। এমনকি এর প্রতিবাদ করলেই শোকজের মুখে পড়তে হয়েছে।
জিসি পুরান ধুলাউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যার টাকা চেয়েছিলেন, আমরা দিয়েছিলাম। পরে অক্টোবরের শেষের দিকে ইউএনও অফিস থেকে ২০-২২টি বই দেয়া হয়।
ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদ হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক বললেন ইউএনও অফিস থেকে বই আনতে। আমি গিয়ে বইগুলো নিয়ে এসেছি। তবে কোনো সরকারি নির্দেশ বা চিঠি পাইনি। শিক্ষা অফিস বললে আমরা সেটিই করি।
আফরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ২২-২৩টি বই নিয়েছি। বই প্রদান এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, অনেক স্কুল এখনও বই নিচ্ছে।
শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের শোকজের ব্যাপারে জানতে চাইলে, এসব শিক্ষকরা জানান, তারা শুনেছেন কিছু জায়গায় শোকজ করা হয়েছে। তবে বই নেয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী না তা তারা নিশ্চিত নন। তারা দাবি করেন, শিক্ষকরা স্কুলে দেরি আসা বা অন্যান্য ছোটখাটো কারণে শোকজের মুখে পড়েছেন।
এ পরিস্থিতি শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা জানান, বই নেয়ার বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা ছিল না। তবে চাপ দিয়ে বই নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষকরা জানান, যারা এ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ইউএনও জাহিদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের বাধ্য করা হয়েছে ইউএনও অফিস থেকে বই নিতে। এতে কিছু শিক্ষকদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এ অভিযোগগুলো উড়িয়ে দিয়েছেন ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
সাঁথিয়া ২নং ও চোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বই বিতরণের বিষয়ে আপত্তি বা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের দেরিতে স্কুলে আসা বা অন্যান্য কারণে শোকজ করা হয়েছে। তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চান না। শোকজের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জবাব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুলতান আহমেদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন জানান, শুনেছি ইউএনও স্যার কিছু বই দিয়েছেন শিক্ষকদের। তবে আমি এ বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা বা নির্দেশনা প্রদান করিনি। বই নিতে বলা বা টাকা দিতে বলার অভিযোগ মিথ্যা। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শোকজ করা হয়েছে। তবে এটির সঙ্গে বই নেবার কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বইয়ের বাইরে অন্যান্য জ্ঞানমূলক বই পড়া প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে কিছু বই দেয়া হয়েছে। এখানে কাউকে কোনো চাপ দেয়া হয়নি। কাউকে শাস্তিও দেয়া হয়নি।
পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সরকারি নির্দেশ ছাড়া স্কুলে বই দেয়া এবং শিক্ষককে বই নিতে চাপ দেয়ার সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
আপন দেশ/এমবি/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।