বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন ও আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খান। ফাইল ছবি
বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন মামলা দিয়ে চাইলেন চাঁদা। তিনি নওগাঁ বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলমকে হত্যার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বেলাল।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে এ দুই নেতার কল রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের কথোপকথন ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন ৫ নভেম্বর গোবরচাঁপা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খানও আছেন। এ মামলায় আরও ১২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
কল রেকর্ডে বেলাল হোসেন সৌখিন প্রথমে সামছুল আলম খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় নিজেকে ‘চ্যাংলা সৌখিন’ পরিচয় দেন। এরপর কথোপকথনের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আপনি মাইনকাকে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। সে কি আপনাকে বাঁচাতে পারবে? এ কথা শোনার পর সামছুল আলম জানান, এটা গুজব, আমি কারও কাছে ২ লাখ টাকা দেইনি। আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছেন তাই হবে।
এর পরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সৌখিন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর হাতে ঠিক আছে। কিন্তু আপনার মৃত্যু আল্লাহ আমার হাতে লেখে রেখেছে। তাহলে সেটার কি হবে? সৌখিন ১ লাখ টাকা দাবি করেন এবং নিজের বিকাশ ও নগদ একাউন্ট নম্বর দিয়ে বলেন, বেঁচে থাকতে চাইলে আমাকেও ১ লাখ টাকা দেবেন।
কল রেকর্ডটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর, বেলাল হোসেন সৌখিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে ছড়ানো অডিও আমার নয়। ৫ আগস্টের পর আমি শামসুল আলম খানের সঙ্গে কথা বলিনি। ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় বাদী হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত।
ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডে বিএনপি নেতা সৌখিনকে বার বার ‘মাইনকা’ বলতে শোনা যায়। এখানে ‘মাইনকা’ বলতে বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গদেব চৌধুরী মানিককে বুঝিয়েছেন বেলাল হোসেন সৌখিন। স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আওরঙ্গদেব চৌধুরী মানিক বলেন, ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ড সৌখিনের। অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সৌখিন বিস্ফোরক আইনে যে মামলা করেছে সেটি পরিষ্কারভাবে চাঁদা আদায়েরই রশিদ। পুরো উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা জানেন কীভাবে তারা নোংরামি করে বেড়াচ্ছে। ২ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার আমার বিরুদ্ধে যে অপবাদ দেয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকির হোসেন চৌধুরীর আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন সৌখিন। ৫ আগস্টের পর তিন মাসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার এজাহার লিখেও নাটকীয়তা করে যাচ্ছিলেন সৌখিন। মামলায় নাম বাদ দেওয়ায় হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে গেছেন তিনি। কল রেকর্ডটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করার আগের দিনের হয়ে থাকতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, সৌখিনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। কল রেকর্ডটির সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।